গিয়ানার ভাগ্য বদলে গিয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন আমেরিকান তেল কোম্পানি এক্সন গভীর সমুদ্রে বিশাল তেলের ভাণ্ডার আবিষ্কার করে।
ছোট্ট এই দেশটিতে বর্তমানে দ্রুত গতিতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে, কিন্তু এর পেছনে পরিবেশগত ঝুঁকি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের প্রশ্নও উঠছে।
দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রায় ১১ বিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এই আবিষ্কারের ফলে গায়ানা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালে দেশটির জিডিপি-র বৃদ্ধি ছিল ৩৩ শতাংশের বেশি, এবং ২০২৪ সালে তা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
তেল আবিষ্কারের ফলে দেশটির সরকার একে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইরফান আলী নতুন তেল সম্পদ ব্যবহার করে উন্নত অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করার কথা বলছেন।
তবে, পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পথে হাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
তাদের মতে, এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর সুফল হয়তো গায়ানার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে না।
এক্সন এবং তার সহযোগী কোম্পানিগুলো বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করছে।
২০২৭ সালের মধ্যে এই উৎপাদন দ্বিগুণ করে ১৩ লাখ ব্যারেল করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে, গায়ানাকে একই সঙ্গে জলবায়ু চ্যাম্পিয়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল একটি দেশে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে।
দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ ভূমি এখনও সবুজ বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত, যা এটিকে কার্বন শোষণকারী দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে।
তবে, অনেকে আশঙ্কা করছেন, গায়ানা ‘রিসোর্স কার্স’-এর শিকার হতে পারে।
অর্থাৎ, নতুন এই সম্পদ দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পরিবর্তে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সুযোগ আসার কারণে দুর্নীতি বেড়ে যেতে পারে।
এক্সনের সঙ্গে গায়ানা সরকারের করা চুক্তি নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।
এই চুক্তি অনুযায়ী, তেল থেকে উপার্জিত অর্থের ৭৫ শতাংশ কোম্পানিটি নিজেদের কাছে রাখে এবং বাকি ২৫ শতাংশ সরকার ও কোম্পানির মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
এছাড়াও, সরকার ২ শতাংশ রয়্যালটি পায়।
অনেক সমালোচক এই চুক্তিকে ‘অনুচিত’ বলছেন।
গভীর সমুদ্র থেকে তেল উত্তোলনের ফলে পরিবেশের উপর সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ।
বিশেষ করে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে রাজধানী জর্জটাউন ২০৩০ সালের মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী মেলিন্ডা জাঙ্কি বলছেন, সরকার একটি ‘ধ্বংসাত্মক’ পথে উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, এক্সন তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।
তারা দাবি করে, এর মাধ্যমে গায়ানার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
তবে, অনেকেই বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে, গায়ানার জন্য দ্রুত নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে যাওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, তেল নির্ভরতা দেশটির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন