যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে: রুশ জিমন্যাস্টদের প্রত্যাবর্তন, বিতর্কিত আলিঙ্গন!

আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন (এফআইজি)-এর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রাশিয়ান জিমন্যাস্টদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

যদিও ক্রীড়াঙ্গনে নিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখার কথা, তবে কিছু রুশ জিমন্যাস্টের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর যোগসূত্র এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি তাদের সমর্থনের বিষয়টি অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে।

সম্প্রতি, এফআইজি প্রেসিডেন্ট মোরিনারি ওয়াতানাবে’র মস্কো সফরকালে বিতর্ক আরও বাড়ে।

সেখানে তিনি রুশ জিমন্যাস্ট নিকিতা নাগোর্নি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ক্যামেরার সামনে তাদের উষ্ণ আলিঙ্গন করতে দেখা যায়।

নাগোর্নি একজন খ্যাতিমান জিমন্যাস্ট, যিনি রাশিয়ার হয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন।

তবে, তিনি একইসঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের একজন বড় সমর্থক এবং রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

নাগোর্নি’র এই ভূমিকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এমনকি তিনি যুদ্ধ-সংক্রান্ত প্রচারণায় জড়িত ছিলেন এবং ইউক্রেন থেকে শিশুদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এফআইজি-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ান এবং বেলারুশিয়ান ক্রীড়াবিদদের ‘নিরপেক্ষ’ অ্যাথলেট হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এখন পর্যন্ত, ১৭ জন পুরুষ ও মহিলা আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টকে এবং বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ১২০ জন অ্যাথলেট ও সাপোর্ট স্টাফকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তবে, প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘নিরপেক্ষতা’ কতটুকু বাস্তবসম্মত?

কারণ, অনুমোদন পাওয়া অনেক অ্যাথলেটের সঙ্গে রুশ সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী অ্যাঞ্জেলিনা মেলনিকোভা’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি রুশ সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল স্পোর্টস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত এবং একটি বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে ‘Z’ প্রতীক প্রদর্শিত হয়েছিল।

এই প্রেক্ষাপটে, এফআইজি-এর স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিশেষ করে, কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে অ্যাথলেটদের নির্বাচন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে, ওয়াতানাবে এবং নাগোর্নি’র মধ্যেকার সাক্ষাৎ এবং আলিঙ্গন অনেক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

অনেকের মতে, এর পেছনে রাশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের প্রভাবশালী অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের প্রত্যাবর্তনের একটি গভীর যোগসূত্র থাকতে পারে।

খেলাধুলায় নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে এমন বিতর্ক নতুন নয়।

অতীতেও, রাশিয়ান জিমন্যাস্ট ইভান কুলিয়াক ইউক্রেনীয় জিমন্যাস্ট ইলিয়া কোভতুনের সঙ্গে একই মঞ্চে উঠে যুদ্ধের সমর্থনে ‘Z’ প্রতীক প্রদর্শন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে এই ধরনের ঘটনা, বিশেষ করে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, নিরপেক্ষতার ধারণাটিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই ঘটনাগুলো ক্রীড়া এবং রাজনীতির পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন করে সামনে নিয়ে আসে, যা বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদী মানুষের জন্যেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *