এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কেন এত আলোচনা? বিদেশিদের চাকরি, বাড়ছে বিতর্ক!

যুক্তরাষ্ট্রে H-1B ভিসা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ, উদ্বেগে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আকাঙ্ক্ষিত H-1B ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এই ভিসার মাধ্যমে বিদেশি পেশাদার কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ মেলে। সম্প্রতি ভিসা আবেদন এবং নবায়নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তথ্য চাওয়ায় এই ভিসা প্রোগ্রামটি আবার আলোচনায় এসেছে। এই পদক্ষেপের কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের দক্ষ কর্মীরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে ইচ্ছুক।

H-1B ভিসা আসলে কী? এটি মূলত একটি নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা, অর্থাৎ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাস এবং কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়। ১৯৯০ সালের ইমিগ্রেশন আইনের অংশ হিসেবে এই ভিসার প্রচলন শুরু হয়।

এই ভিসার মাধ্যমে বিশেষভাবে দক্ষ এবং স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত প্রযুক্তিখাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে এই ভিসার ব্যবহার বেশি। তবে স্বাস্থ্যখাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও কর্মী নিয়োগের জন্য H-1B ভিসা ব্যবহার করা হয়।

প্রতি বছর এই ভিসার মাধ্যমে ৬৫ হাজার নতুন কর্মী এবং মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ হাজার কর্মী নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

H-1B ভিসা নিয়ে বিতর্কের কারণ কী? এই ভিসার মূল ধারণা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী, যারা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় না, তাদের বিদেশ থেকে নিয়োগ করতে পারবে। সমর্থকরা মনে করেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণের একটি কার্যকর উপায়।

কিন্তু অনেকেই মনে করেন, এই ভিসা মার্কিন নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দেয়। কেউ কেউ এই প্রোগ্রামটি বাতিলেরও দাবি জানান।

বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপের কারণে অনেকেই উদ্বেগে রয়েছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অভিবাসন আইনজীবী জানিয়েছেন, H-1B ভিসা আবেদনকারী বা নবায়নকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। সাধারণত, বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন: আঙুলের ছাপ) এই ধরনের ভিসার জন্য প্রয়োজন হয় না।

এছাড়াও, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাধারণত সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু এবার বিস্তারিত কিছু উল্লেখ না করে বায়োমেট্রিক তথ্য চাওয়া হচ্ছে, যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব এবং অভিবাসন বিষয়ক দপ্তর (USCIS) জানিয়েছে, তারা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে চাইছে এবং এরই অংশ হিসেবে ভিসা আবেদনকারীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তাদের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জালিয়াতি কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে, অভিবাসন নীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকেই চিন্তিত। বিশেষ করে, অবৈধভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের বিতাড়িত করার ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপগুলো উদ্বেগের কারণ।

সম্প্রতি এপ্রিল মাস থেকে ১,০০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, H-1B ভিসার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটা হলে, এর প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকেও যারা সেখানে কাজ করতে যেতে চান, তাদের ওপরও পড়তে পারে।

কারণ, ভিসানীতি কঠোর হলে, দক্ষ কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *