হাইতির মানুষ ফিরতে চায় ভিটেতে, গ্যাং-পুলিশের দ্বন্দ্বে বাড়ছে শঙ্কা!

হেইতিতে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে, যেখানে গ্যাং সহিংসতার কারণে लाखों মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উদ্বাস্তু শিবিরে অসহায় জীবন যাপন করা মানুষগুলো যখন নিজেদের ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফিরে যেতে চাইছে, তখন তাদের দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে গ্যাংগুলোর অপ্রত্যাশিত আচরণ।

গ্যাংগুলো এখন তাদের পুরনো বসতবাড়িতে ফিরতে উৎসাহিত করছে, কিন্তু পুলিশের সতর্কবার্তা সেখানকার পরিস্থিতি এখনো বসবাসের অযোগ্য।

পোর্ট-অ-প্রিন্সে, এক সময়ের জনবহুল এলাকাগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত নভেম্বরে গ্যাংগুলোর হামলায় সোলিনো, নাজন এবং দেলমাস ৩০-এর মতো এলাকাগুলো জনশূন্য হয়ে যায়।

এখানকার বাসিন্দারা হয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে, না হয় শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এখন যখন গ্যাংগুলো তাদের ফিরে আসার কথা বলছে, তখন সেখানকার বাসিন্দারা দ্বিধায় ভুগছে, তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে তারা সন্দিহান।

এরিক ও নাইকা লাফ্লায়ার নামের দুই কিশোরী তাদের মায়ের নির্দেশে তাদের পুরাতন বাড়িতে গিয়েছিল, যেখানে একসময় তাদের বসবাস ছিল। তারা ফিরে এসে দেখে তাদের ঘরটি এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ।

তাদের চোখে জল চলে আসে। তারা জানায়, “আমরা ভেবেছিলাম হয়তো ফিরে আসার মতো কিছু পাবো, কিন্তু কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই তাদের পুরোনো জীবনে ফিরতে চাইছে। কেউ কেউ তাদের ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর পুনরায় তৈরি করতে চায়, আবার কেউ তাদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়।

কিন্তু তাদের এই প্রত্যাবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশের সতর্কবার্তা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এলাকাটি এখনো নিরাপদ নয়।

তবে, অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ পুলিশের এই সতর্কতাকে উপেক্ষা করে তাদের পুরনো ঠিকানায় ফিরতে চাইছে। তাদের একটাই চাওয়া—একটি নিরাপদ আশ্রয় এবং স্বাভাবিক জীবন।

রোনাল্ড অ্যাম্বয়েস নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি টাইলের কাজ করতেন। গ্যাং হামলার আগে তিনি সপরিবারে সোলিনোতে বসবাস করতেন। তিনি জানান, “আমি আমার পরিবারের সঙ্গে একটি ছোট ও নোংরা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।

পুলিশের কথা বিশ্বাস করব, নাকি গ্যাংদের, তা বুঝতে পারছি না।”

অন্যদিকে, জেরাল্ড জ্যাঁ নামের এক ব্যক্তি, যিনি একসময় সোলিনোতে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কেন্দ্র, একটি হার্ডওয়্যারের দোকান, একটি বোটানিকা এবং আটটি বাড়ির মালিক ছিলেন, তিনি এখন উদ্বাস্তু।

গ্যাংগুলো তার সব কিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার সারা জীবনের উপার্জনের বিনিময়ে আমি কেবল একজোড়া প্যান্ট ও স্যান্ডেল নিয়ে পালাতে পেরেছি।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হাইতিতে গ্যাং সহিংসতার কারণে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার জানান, “প্রায় সবাই আমাকে বলেছে, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই, আমাদের জীবন নতুন করে শুরু করতে চাই, কিন্তু আমরা সবাই খুব ভীত।”

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। শিশুদের সশস্ত্র দলে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে।

হেইতির এই সংকট সেখানকার মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

তাদের একটাই প্রত্যাশা—একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *