**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাইতিয়ান অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বাড়ছে উদ্বেগ**
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা হাইতিয়ান অভিবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (অস্থায়ী সুরক্ষা স্থিতি) বা টিপিএস বাতিলের চেষ্টা করছে, যার ফলে তাদের হাইতিতে ফেরত পাঠানোর সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
হাইতি বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভয়াবহ গ্যাং সহিংসতার শিকার, যা অভিবাসীদের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১০ সালে হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর হাইতিয়ান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দিয়ে টিপিএস চালু করা হয়। এই নীতির অধীনে বর্তমানে পাঁচ লক্ষাধিক হাইতিয়ান অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
টিপিএস বাতিল হলে এদের অনেকেই উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।
২০২৪ সালে হাইতি ছেড়ে আসা ‘টিটি’ নামের এক হাইতিয়ান নারী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হাইতিতে ফিরতে হলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৮৫ শতাংশ এখন সশস্ত্র গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর হাইতিতে ৫,৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
টিটি’র ভাষায়, “দেশে ফেরার অর্থ হলো কার্যত মৃত্যুর দিকে যাওয়া।”
ট্রাম্প প্রশাসন টিপিএস বাতিল করতে চাওয়ার কারণ হিসেবে বলছে, হাইতির পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে ভালো। কিন্তু হাইতিয়ান অভিবাসী ও তাদের সমর্থনকারীরা এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন।
তাদের মতে, হাইতির নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত নাজুক।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের টিপিএস বাতিলের সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আদালতের এই রায়ের ফলে হাইতিয়ান অভিবাসীরা আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।
ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরে প্রায় ১৫ হাজার হাইতিয়ান অভিবাসী বসবাস করেন। সেখানকার স্থানীয় গির্জার এক যাজক জানান, টিপিএস বাতিল হলে এই কমিউনিটির মানুষ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন।
তিনি আরও জানান, হাইতিয়ান অভিবাসীরা সাধারণত স্থানীয় পোশাক ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং অ্যামাজন-এর মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
টিপিএস বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে তারা এখন কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতেও রয়েছেন।
হাইতিয়ান সাপোর্ট সেন্টারের পরিচালক ভাইলস ডোরসেইনভিল বলেন, “হাইতিতে ফিরে যাওয়া আত্মহত্যার শামিল হবে।” তিনি জানান, হাইতিয়ান অভিবাসীরা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে এখন ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
হাইতিয়ান অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। যদি আদালত টিপিএস বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন, তাহলে তাদের কিছুটা সময় পাওয়া যাবে।
তবে হাইতির পরিস্থিতি যদি দ্রুত উন্নতি না হয়, তাহলে তাদের জীবন আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
টিটি’র ভাষায়, “আমার বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন