হজ কী? ছবি সহ দেখুন, ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর!

হজ: ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতি বছর, সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানরা পবিত্র শহর মক্কায় একত্রিত হন হজ পালনের উদ্দেশ্যে।

এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার পালন করা ফরজ। আগামী ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এই নিবন্ধে, আমরা হজ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা বিশেষভাবে আমাদের বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হজ কী এবং কেন?

হজ হলো মক্কার পবিত্র কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে পালিত একটি বার্ষিক ইবাদত। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

হজের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। পবিত্র কোরআনে হজের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এবং হজ পালনকারীদের জন্য রয়েছে অশেষ ফজিলত।

হজের সময়কাল ও প্রস্তুতি

ইসলামিক ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ মাস, জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ অথবা ১৩ তারিখ পর্যন্ত হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা চলে। এই সময়সূচি চান্দ্র বর্ষপঞ্জির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় প্রতি বছর গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারে ১০ থেকে ১২ দিন এগিয়ে আসে।

যেমন, ২০২৫ সালে হজ অনুষ্ঠিত হবে সম্ভবত ৪ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত। হজ পালনের জন্য শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়ই থাকতে হয়। হজযাত্রীদের জন্য ভ্রমণের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।

হজের অপরিহার্য রীতিনীতি

  • ইহরাম বাঁধা: হজ যাত্রার শুরুতে শরীর ও পোশাক পবিত্র করার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধা হয়।
  • কাবা শরিফ তাওয়াফ: কাবা ঘরের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করা হয়, যা তাওয়াফ নামে পরিচিত।
  • সাঈ করা: সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানো হয়।
  • আরাফাতের ময়দানে অবস্থান: জিলহজ মাসের নবম দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
  • মুজদালিফায় রাত্রিযাপন: আরাফাত থেকে ফেরার পর মুজদালিফায় রাত কাটানো হয়।
  • শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ: মিনায় শয়তানের প্রতীক হিসেবে নির্মিত স্তম্ভগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
  • কোরবানি: পশু কোরবানি করা হয়, যা ত্যাগ ও উৎসর্গের প্রতীক।

হজের তাৎপর্য

হজ মুসলিমদের জন্য আত্ম-উন্নয়ন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অসাধারণ সুযোগ। এটি মুসলিমদের মধ্যে একতা ও ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে।

হজের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের অতীতের পাপ মোচন করে নতুন জীবন শুরু করতে পারেন। হজ শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি বিশাল আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, যা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানকে শক্তিশালী করে তোলে।

হজের বিধি-নিষেধ

হজের সময় কিছু কাজ করা নিষিদ্ধ। যেমন: ঝগড়া করা, খারাপ কথা বলা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা, নখ বা চুল কাটা ইত্যাদি। ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নিষিদ্ধ কাজ করলে তার কাফ্ফারা দিতে হয়।

হজের সমাপ্তি ও ঈদ-উল-আযহা

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হয়। এই দিনে মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন এবং আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। ঈদ-উল-আযহা ত্যাগ ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

উপসংহার

হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা প্রতিটি মুসলমানের জীবনে একবার হলেও পালন করা উচিত। এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্ম-উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

হজ পালনের মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন এবং একটি সুন্দর জীবন যাপন করতে পারেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *