ডুবে যাওয়া শহরে: যেখানে ফোটে রহস্যময় কালো গোলাপ!

টাইগার্সের দেশ তুরস্ক: জলের তলে শহর, আর ফোটে কালো গোলাপ।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত তুরস্ক (Turkey) একটি ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত হাফেতি (Halfeti) তেমনই এক আকর্ষণীয় স্থান, যা একইসঙ্গে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত।

এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল জলের নিচে চলে যাওয়া এক প্রাচীন শহর, আর তার পাশেই ফোটা ‘কালো গোলাপ’।

২০০০ সালে বিরজিক বাঁধ (Birecik Dam) তৈরির ফলে হাফেতির একটি বড় অংশ, প্রায় ৪০ শতাংশ জলের নিচে তলিয়ে যায়। এর ফলে এখানকার প্রায় ৬,০০০ মানুষকে অন্যত্র সরে যেতে হয়।

পুরনো শহরটির অনেক বাড়িঘর, দোকানপাট এবং ১৯ শতকের একটি মসজিদ (Merkez Camii) জলের গভীরে হারিয়ে যায়। তবে, উঁচু স্থানে অবস্থিত কিছু বাড়ি এখনো দৃশ্যমান।

বর্তমানে পর্যটকদের কাছে এই ‘ডুবে যাওয়া শহর’ এক বিশেষ আকর্ষণ। নৌকায় করে অথবা জেট স্কি বা ফ্লাইবোর্ডে চড়ে পর্যটকেরা এখানকার জলের নিচের স্থাপত্য উপভোগ করেন। এছাড়াও, ডুবুরিদের কাছেও হাফেতি একটি প্রিয় গন্তব্য।

হাফেতির আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানকার ‘কালো’ গোলাপ। স্থানীয়দের মতে, হাফেতিই একমাত্র জায়গা যেখানে এই গোলাপগুলি জন্মায়। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গোলাপগুলি আসলে গাঢ় লাল রঙের, যা বিশেষ কিছু মাটির কারণে এমন দেখায়।

এই গোলাপ থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, যেমন – আইসক্রিম, সাবান, চা, স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলিও এই ফুলের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়েছে।

হাফেতির এই কালো গোলাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক স্থানীয় কিংবদন্তি। গল্পটি এমন – আদি নামের এক স্থপতি হাফেতির মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তাঁর নাতনী ভারতুহির সঙ্গে এক যুবকের প্রেম হয়, কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক পরিবারের অমতে ছিল।

একদিন, তাঁরা দুজনেই ইউফ্রেটিস নদীতে ঝাঁপ দেন এবং মারা যান। এরপর থেকে, হাফেতির প্রতিটি গোলাপ “কালো” হয়ে ফোটা শুরু করে, যা শোক, প্রতিশোধ আর ভালোবাসার এক প্রতীক হয়ে ওঠে।

ঐতিহাসিক দিক থেকেও হাফেতির গুরুত্ব অনেক। এখানে রয়েছে রুমকালে দুর্গ (Rumkale Fortress)। এই দুর্গটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত হয়েছিল, পরে আর্মেনীয়, মামলুক এবং অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনে আসে।

২০১৩ সালে, হাফেতিকে ‘সিতাস্লো’ (Cittaslow) শহরের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। হাফেতির মানুষজন তাঁদের শহরের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতি গভীর আবেগ অনুভব করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *