ভয়ঙ্কর খবর! হ্যালোইন-এ এবার ‘স্বাদ বদল’, কেন?

শিরোনাম: বিশ্ববাজারে কোকোর দাম বৃদ্ধি: কীভাবে এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের উপর

বর্তমান বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, যা একটি উদ্বেগের বিষয়। উন্নত দেশগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির এই ঢেউ লেগেছে, এবং এর কারণগুলো বেশ জটিল।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন উৎসবের সময় শিশুদের পছন্দের ক্যান্ডির দাম বেড়েছে, সেই সাথে কমেছে চকলেটের পরিমাণ। আসুন, এই পরিবর্তনের পেছনের কারণগুলো এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হল কোকো বীনের অভাব। বিশ্বের প্রধান কোকো উৎপাদনকারী দেশগুলো – ঘানা এবং আইভরি কোস্ট – এ গত বছরগুলোতে আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করতে পারেনি।

এর ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোকো বীনের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের শুল্ক (ট্যারিফ) এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতিও এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

কোকো বীনের দাম বাড়ার কারণে, ক্যান্ডি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দামে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাদের প্যাকেজের আকার ছোট করে দিচ্ছে, যা “শ্রিঙ্কফ্লেশন” নামে পরিচিত।

অর্থাৎ, পণ্যের দাম একই রেখে, ভেতরে থাকা জিনিসের পরিমাণ কমানো হচ্ছে। এছাড়াও, কিছু কোম্পানি চকলেটের বদলে চিনি ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে লাভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

উদাহরণস্বরূপ, আগে যেখানে একটি চকলেট বারে ৭৫% কোকো থাকত, এখন সেখানে ৬৫% কোকো ব্যবহার করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর হ্যালোইন মৌসুমে ক্যান্ডির দাম ১০.৮% বেড়েছে, যা সাধারণভাবে মূল্যবৃদ্ধির হারের প্রায় চারগুণ বেশি।

শুধু ক্যান্ডি নয়, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। যেমন, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন উপলক্ষে চকলেট ও ক্যান্ডি বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি), যা আগের বছরের তুলনায় ২.২% বেশি।

এই পরিস্থিতিতে ছোট ছোট চকলেট প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা সাধারণত ভালো মানের কোকো ব্যবহার করে এবং স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে কোকো কিনে থাকে।

কিন্তু দাম বাড়তে থাকায় তাদের পক্ষে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

যদিও কোকোর দাম সম্প্রতি কিছুটা কমেছে, তবুও ভোক্তারা এখনো বেশি দামেই পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, কোম্পানিগুলো বর্তমানে সেই কোকো ব্যবহার করছে, যা তারা বেশি দামে কিনেছিল।

এছাড়া, প্যাকেজিং এবং জ্বালানির দাম বাড়ার কারণেও পণ্যের দাম কমছে না।

এই পরিস্থিতি শুধু আমেরিকার ভোক্তাদের জন্যই উদ্বেগের কারণ নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেখানে এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে, তার প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়তে পারে।

তাই, এই ধরনের বৈশ্বিক প্রবণতা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *