গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষুধার অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ!

গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে হামাস। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজায় সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরেই এই অভিযোগ ওঠে। হামাস একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও অভিহিত করেছে।

জানা গেছে, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই, ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবার বিমান হামলা শুরু করে এবং পরে স্থল অভিযানও চালায়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বুধবার এক বিবৃতিতে গাজায় অবরোধকে হামাসের বিরুদ্ধে “প্রধান চাপ প্রয়োগের কৌশল” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি এও জানান, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিধিনিষেধ শিথিল করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গাজায় অপুষ্টি দ্রুত বাড়ছে বলে সতর্ক করা হলেও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে “যুদ্ধাপরাধের শামিল” বলে নিন্দা জানায়। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল “সাত সপ্তাহ ধরে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও জ্বালানিসহ মৌলিক চাহিদা থেকে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বঞ্চিত করছে।” তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি গাজা উপত্যকার উপর আরোপিত অবরোধ এবং সেখানকার মানুষের দূর্দশা বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (International Court of Justice – ICJ) ইসরায়েলকে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সামগ্রীসহ জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইসরায়েল বারবার এই নির্দেশ অমান্য করে আসছে। তাদের দাবি, হামাস এই সহায়তা অপব্যবহার করে।

ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ধারণা, গাজায় খাদ্য সরবরাহ এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। তারা এখন এমন কিছু উপায় খুঁজছে, যাতে হামাসের কাছে সাহায্য পৌঁছানো না যায়। এর মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে “ভ্রাম্যমাণ সহায়তা কেন্দ্র” তৈরি করার প্রস্তাবও রয়েছে।

জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সূত্র থেকে জানা গেছে, ইসরায়েল আগে থেকেই ঠিক করতে চাইছে কারা সাহায্য পাবে। অর্থাৎ, কারা সুবিধাভোগী হবে, তা আগে থেকেই যাচাই করতে চাইছে তারা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমনটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

জাতিসংঘ গাজায় তীব্র খাদ্যসংকটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (OCHA) জানিয়েছে, মার্চ মাসে ৩,৬৯৬ জন শিশুকে তীব্র অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।

ওচা আরও জানায়, মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য জরুরি সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে গাজায় খাদ্য গ্রহণ মারাত্মকভাবে কমে গেছে, যা গত সাত সপ্তাহ ধরে চলছে।

প্রতিবেদক আরও যোগ করেন, “গাজার জন্য এটাই ইসরায়েলের সরকারি নীতি: কোনো খাদ্য নেই, পানি নেই, সাহায্য নেই। একই সঙ্গে ইসরায়েল ক্রমাগতভাবে গাজার ভূমি দখল করে চলেছে।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *