ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসকে আহ্বান জানানোয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের তীব্র সমালোচনা করেছে হামাস। হামাসের পক্ষ থেকে আব্বাসের এই মন্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আব্বাসের আগের দিনের মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
বাসেম নাইম আরও বলেন, “আব্বাস বারবার ও সন্দেহজনকভাবে ইসরায়েলের অপরাধ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর তাদের চলমান আগ্রাসনের জন্য হামাসকে দায়ী করছেন।”
বুধবার রামাল্লায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) সদর দফতরে এক বৈঠকে আব্বাস হামাসকে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জিম্মিদের আটকে রাখা ইসরায়েলকে গাজায় হামলার ‘ excuse’ বা অজুহাত তৈরি করে দিচ্ছে।
আব্বাস আরও বলেন, “আমি এর মূল্য দিচ্ছি, আমাদের মানুষ এর মূল্য দিচ্ছে, ইসরায়েল নয়। আমার ভাই, তাদের (জিম্মিদের) হস্তান্তর করুন।”
আব্বাস হামাসের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, “তোমরা কী পাও, তা হস্তান্তর করো এবং আমাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দাও।”
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ফাতাহ পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে এই মন্তব্য করেন, যাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক গত প্রায় দুই দশক ধরে রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিভেদ তৈরি করেছে।
ফাতাহ ও হামাসের মধ্যেকার এই বিভেদ দীর্ঘদিনের।
আব্বাস ও পিএ প্রায়ই হামাসকে ফিলিস্তিনের ঐক্যকে দুর্বল করার জন্য অভিযুক্ত করে থাকে।
অন্যদিকে হামাস ফাতাহকে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা ও পশ্চিম তীরে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার জন্য সমালোচনা করে।
ফাতাহ থেকে আলাদা হওয়া প্যালেস্টাইন মুজাহিদিন মুভমেন্ট বুধবার এক বিবৃতিতে আব্বাসের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা প্রেসিডেন্ট আব্বাসের কেন্দ্রীয় পরিষদের বৈঠকে প্রতিরোধ এবং আমাদের জনগণের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সম্পর্কে দেওয়া আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা পিএ নেতৃত্বের এই ধরনের বক্তব্য অব্যাহত রাখার নিন্দা জানাই, যা প্রতিরোধের অপরাধীকরণ করে এবং দশকের পর দশক ধরে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান অপরাধ, বিশেষ করে গাজায় গণহত্যা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমকে সংযুক্ত করা এবং সেখানকার জনগণের ওপর অত্যাচারের দায় থেকে মুক্তি দেয়।”
মুভমেন্ট আব্বাসকে তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর সেখানে ১,৯২৮ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৫১,৩০৫ জনে।
নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
হামাসের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনার জন্য অবস্থান করছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা