গাজায় ইসরায়েলের ‘ক্ষুধা যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকলে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন, বলছে হামাস। ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠীর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, গাজায় যখন “ক্ষুধা এবং গণহত্যার যুদ্ধ” চলছে, তখন ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালিয়ে যাওয়া তাদের কাছে অর্থহীন।
হামাসের এই ঘোষণার কারণ হলো, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আসন্ন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা। ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিযানে গাজা ভূখণ্ড দখল এবং সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে ইসরায়েল গাজায় “ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও হত্যার” মতো অপরাধ বন্ধ করে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর সেখানকার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় অবরোধ আরোপ করার পর সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সেখানকার ফিলিস্তিনিরা শিশুদের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে পচা বা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার অনেকের কাছে কোনো খাবারই নেই। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় বাজার এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো থেকে খাদ্য সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণরূপে ফুরিয়ে গেছে। সংস্থাটি আরও জানায়, বর্তমানে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখেরও বেশি মানুষের ন্যূনতম চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না এবং দুর্ভিক্ষের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে গাজার মানুষ।
পিআরসিএস-এর মতে, বর্তমানে কমিউনিটি রান্নাঘরে শুধুমাত্র সীমিত পরিমাণে ডাল বিতরণ করা হচ্ছে, কারণ আগে থেকে মজুদ করা সমস্ত ত্রাণ ফুরিয়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) এই উদ্বেগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং এটিকে রাজনীতিকরণ না করারও অনুরোধ করেছে। আইসিআরসি’র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কার্ডন বলেন, “গাজার বেসামরিক মানুষের প্রয়োজনীয়তা এই মুহূর্তে মারাত্মকভাবে বাড়ছে।
গাজার খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে বসবাসকারী ৩৯ বছর বয়সী আওয়াদ আল-জাজিরাকে জানান, “ইসরায়েল প্রতিদিন যুদ্ধ, হত্যা, বোমা হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ, অবরোধ এবং অনাহার বন্ধ করেনি। তাহলে তারা কীভাবে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের কথা বলতে পারে?” তিনি বিশ্ববাসীর প্রতি এই দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করার আহ্বান জানান।
গাজা শহরের বাসিন্দা আয়া আল-সকাফি জানিয়েছেন, অপুষ্টি এবং ওষুধের অভাবে গত সপ্তাহে তার চার মাসের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, “মেয়েটির ওজন ছিল মাত্র ২.৮ কেজি। মারাত্মক অপুষ্টির কারণে তার রক্তে অ্যাসিড বেড়ে গিয়েছিল, সেইসঙ্গে লিভার ও কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল এবং আরও অনেক জটিলতা দেখা দেয়। অপুষ্টির কারণে তার চুল ও নখও পড়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলি সরকার খাদ্য বিতরণের পদ্ধতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে এবং তারা জাতিসংঘের সংস্থা ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোর পরিবর্তে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে এই দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে সপ্তাহে একবার গাজার দক্ষিণে নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে খাদ্য প্যাকেট নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল প্রতিদিন গাজায় ৬০টি ট্রাক প্রবেশ করতে দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রয়োজনের এক-দশমাংশ। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা