গাজায় মানবিক বিপর্যয়: হামাস কর্তৃক মার্কিন-ইসরায়েলি সেনার মুক্তি, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ফিলিস্তিনিরা
গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জীবনে যখন খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, ঠিক সেই সময়ে হামাস মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সেনা ইদান আলেকজান্ডারের মুক্তি দিয়েছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি শুভেচ্ছা স্বরূপ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সহায়তা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) সোমবার রাতে এই সেনা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, আলেকজান্ডারকে হামাস সদস্য এবং রেড ক্রস কর্মকর্তাদের সঙ্গে। হামাস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি সৌজন্যতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা এই মুক্তি দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল মুক্তি প্রক্রিয়ার জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করতে দেবে। তবে, এই ঘটনার পরেও ইসরায়েল বৃহত্তর যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এমনকি গাজায় তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজার ৯৩ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে, যার ফলে সেখানকার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি অনাহারের শিকার হতে পারে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “গাজার পরিবারগুলো অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সীমান্তেই আটকে আছে। দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পরে ব্যবস্থা নিলে, অনেক মানুষের জন্য তা খুব দেরি হয়ে যাবে।” ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেলও একই সুরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “খাদ্যের অভাব হঠাৎ করে আসে না। এটি এমন একটি স্থানে দেখা দেয় যেখানে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা বাঁচার ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় একটি স্কুল- আশ্রয়কেন্দ্রে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইদান আলেকজান্ডারের মুক্তি ইসরায়েলে আনন্দ এবং হতাশা উভয়ই সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, নেতানিয়াহু যা করতে পারছেন না, ট্রাম্প তা করে দেখিয়েছেন।
গাজায় আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য খাবার যোগাড় করতে পারছে না। তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছে। ইসরায়েলের কট্টরপন্থী সরকার গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সামরিক চাপের কারণেই হামাস আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, হামাসের এই পদক্ষেপের মূল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা