ফিনল্যান্ড আবারও বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্যালুপের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, টানা আট বছর ধরে দেশটি এই স্থানটি ধরে রেখেছে, যা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এই প্রতিবেদনে সুখের মাপকাঠিতে ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সামাজিক বন্ধনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ডের মানুষেরা একে অপরের প্রতি গভীর আস্থা রাখে। তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের কোনো জিনিস হারালেও তা ফেরত পাওয়া যাবে।
এই পারস্পরিক বিশ্বাস, সহানুভূতি এবং সামাজিক সম্পর্কের দৃঢ়তা ফিনল্যান্ডকে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রেখেছে। শুধু ফিনল্যান্ডই নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোও সুখের সূচকে ভালো ফল করেছে।
ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং সুইডেনও শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। নরওয়ে রয়েছে সপ্তম স্থানে।
গ্যালুপের এই প্রতিবেদনে সুখের কারণ হিসেবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সামাজিক বন্ধনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভালো বেতন বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চেয়েও মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রতিবেশী বা অপরিচিত ব্যক্তির কাছে নিজের ওয়ালেট হারালেও তা ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশা করা—এই মানসিকতাই মানুষকে সুখী করে তোলে। এছাড়া, পরিবার এবং একসঙ্গে খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলোও সুখের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মানুষের মধ্যে অন্যের প্রতি সাহায্য করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে, সেই ধরনের কার্যক্রম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে, যা উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, এই তালিকায় কিছু পরিবর্তনও এসেছে। প্রথমবারের মতো কোস্টারিকা এবং মেক্সিকো শীর্ষ দশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্যাঙ্কিংয়ে অবনতি হয়েছে। দেশটি গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়ে ২৪ নম্বরে চলে এসেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।
অক্সফোর্ডের ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এবং ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টের সম্পাদক জন-ইমানুয়েল ডি নেভ বলেন, “এই বছর, এমন কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যা মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করতে পারে।
যেমন—একসঙ্গে খাবার খাওয়া এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখা। স্বাস্থ্য ও সম্পদের বাইরেও এই বিষয়গুলো মানুষের ভালো থাকার জন্য জরুরি।”
এই প্রতিবেদন আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি শুধু একটি দেশের সুখের চিত্র নয়, বরং মানুষের জীবনকে উন্নত করার জন্য সামাজিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার