যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে হার্ভার্ডকে ফেডারেল তহবিল থেকে কার্যত ‘ব্ল্যাকলিস্টে’ ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদি অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার তাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
এর প্রতিকার চেয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সি থেকে তাদের কাছে চিঠি এসেছে, যেখানে অনুদান বাতিলের কথা জানানো হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH) এবং প্রতিরক্ষা বিভাগসহ সাতটি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, এই অনুদানগুলো এখন আর তাদের ‘অগ্রাধিকার’ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর আগে কলম্বিয়া ও ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির মতো আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ এবং ভর্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমে জাতিগত বৈষম্য রয়েছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ধরনের অভিযোগের সঙ্গে তাদের গবেষণা কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আরও জানিয়েছে, সরকার তাদের ওপর এমন সব শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও অধিকারের পরিপন্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সরকার তাদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত একাডেমিক স্বাধীনতা খর্ব করছে। বর্তমানে, হার্ভার্ড তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করছে, তবে তাদের মতে, এটি দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাদের আশঙ্কা, ফেডারেল তহবিল বন্ধ থাকলে তারা গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষক নিয়োগ এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম কেনা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সম্মুখীন হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। তাদের প্রায় ৫৩.২ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের মতে, ফেডারেল সরকারের এই পদক্ষেপ তাদের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আলোচনা এখনো চললেও, আদালতের শুনানিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ আসেনি। ফলে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত এই অচলাবস্থা বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের ক্যাম্পাসে বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এই প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, সরকার তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষাবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন