যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি দেশটির প্রাক্তন সরকারের বিরুদ্ধে একটি আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করেছে। ফেডারেল গবেষণা খাতে দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই মামলাটি হয়।
প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে আদালত এই যুক্তিতে অনুমোদন দেয়নি এবং একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে রায় দিয়েছে।
এই রায়ের পরেও, হার্ভার্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি, কারণ সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থগিত করে দেয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী কার্যকলাপের কারণেই এমনটা করা হয়েছে।
কিন্তু বিচারক অ্যালিসন বারোজ এই যুক্তিতে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি তার রায়ে উল্লেখ করেন, গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে ইহুদি বিদ্বেষের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই এবং সরকারের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল আদর্শগত।
বিচারক বারোজের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল “দেশটির সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত, আদর্শগতভাবে প্রভাবিত আক্রমণ”।
আদালতের এই রায়ের ফলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িকভাবে স্বস্তি পেলেও, পুরো বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।
আপিলের ঘোষণার মাধ্যমে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের আগের অবস্থানেই অটল রয়েছে, যা হার্ভার্ডের উপর আর্থিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট, অ্যালান গারবার, আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “আজকের রায়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে আমরা এর প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করতে থাকব এবং আইনি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করব।”
এই মামলার ফল অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপরও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যারা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) -এর কাছ থেকে সরকার ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চাইছে, যা তাদের স্থগিত করা ফেডারেল তহবিলের পুনরুদ্ধার করার জন্য।
এছাড়া, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও সরকারের আলোচনা চলছে।
আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে ফেডারেল তহবিল পুনরুদ্ধার এবং চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হতে পারে।
তবে, প্রাক্তন সরকার হার্ভার্ডকে তাদের পেটেন্টগুলোর উপরও নজর রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল।
এ ঘটনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই বিতর্কের ফলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন