হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল তহবিল থাকা সত্ত্বেও, মার্কিন সরকারের সম্ভাব্য কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এখন তারা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের কথা ভাবছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি বাবদ প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলার আটকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টির অলাভজনক ট্যাক্স স্ট্যাটাস বাতিল এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তিতেও বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং পাবলিক হেলথ স্কুল তাদের কিছু কার্যক্রম গুটিয়ে আনতে শুরু করেছে।
যদিও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩.২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল একটি তহবিল (Endowment) রয়েছে, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে, তারপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তহবিল ব্যবহার করা সব সময় সহজ নয়।
এই তহবিলের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা, স্কলারশিপ, অধ্যাপক নিয়োগ, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট। বাকি ২০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
সাধারণত, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। কারণ, এই তহবিলগুলো দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে হয়। এছাড়াও, এই তহবিলের কিছু অংশ এমন খাতে বিনিয়োগ করা হয়, যা সহজে নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় না।
যেমন – হেজ ফান্ড, প্রাইভেট ইক্যুইটি বা রিয়েল এস্টেট-এ বিনিয়োগ করা অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া কঠিন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত তাদের তহবিলের বার্ষিক আয়ের ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ অর্থ বিভিন্ন খাতে খরচ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ অর্থবছরে তারা প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করেছে।
তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই হার বাড়ানো বা কমানোর বিষয়টি হার্ভার্ড কর্পোরেশন-এর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে তহবিল ব্যবহারের ঝুঁকি থাকলেও, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, দ্রুত হারে অর্থ খরচ করলে তহবিলের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এখনো জানায়নি যে তারা তাদের সংরক্ষিত তহবিল থেকে বেশি অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে কিনা। তবে, ফেডারেল সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপের কারণে তারা তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করা হলে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত পুরো টিউশন ফি পরিশোধ করে থাকে।
হার্ভার্ডের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২৭.২ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে – নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখা। এছাড়া, তারা বন্ড মার্কেট থেকে ১.২ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তহবিলের অর্থ হ্রাস পেলে আর্থিক সহায়তা এবং গবেষণা কার্যক্রমেও তার প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেডারেল সরকারের অনুদান তাদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সবচেয়ে বড় উৎস। এই অর্থ হ্রাস পেলে গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটবে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
বর্তমানে হার্ভার্ডের পাবলিক হেলথ স্কুলের বাজেট এর প্রায় ৪৬ শতাংশ আসে ফেডারেল সরকারের অনুদান থেকে। এর ফলে, যক্ষ্মা রোগ বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্পের জন্য তারা প্রায় ৬ কোটি ডলার হারাতে বসেছে।
এছাড়া, মেডিকেল স্কুলও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN