হার্ভার্ডের গবেষক: জামিন পেলেও এখনই মুক্তি নয়, কেন?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, যিনি ব্যাঙের ভ্রুণ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত, মুক্তি পেলেও এখনও আটক। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে রুশ নাগরিক এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ক্সেনিয়া পেট্রোভাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে, ব্যাঙের ভ্রুণ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এই গবেষককে আগামী সপ্তাহে ফৌজদারি মামলার শুনানির জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে বোস্টন লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয় ৩০ বছর বয়সী ক্সেনিয়াকে। এরপর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) তাদের হেফাজতে নেয়।

জানা গেছে, গত বুধবার ভার্মন্টের একটি ফেডারেল আদালতে প্রধান বিচারক ক্রিস্টিনা রেইসের উপস্থিতিতে জামিনের শুনানি হয়। যদিও ক্সেনিয়া লুইসিয়ানার একটি কেন্দ্র থেকে জুমের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভিসানীতি কঠোর করার ফলে বিদেশি অনেক শিক্ষকের ভিসা বাতিল করা হয়, ক্সেনিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ক্সেনিয়ার রাশিয়াতে ফেরত পাঠানো হলে তিনি সেখানে রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, কারণ তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে আগে সোচ্চার ছিলেন।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ক্সেনিয়া বিমানবন্দরে শুল্ক পরীক্ষার সময় জীববৈজ্ঞানিক উপাদান (frog embryos) ঘোষণা করেননি এবং কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। কর্মকর্তারা তার মোবাইল ফোনে এমন কিছু বার্তা পান, যেখানে সহকর্মীরা তাকে বিমানবন্দরে এইসব উপাদান নিয়ে আসার সময় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে সতর্ক করেছিলেন।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ক্সেনিয়া নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা একটি নিবন্ধে জানান, “আমার ধারণা ছিল, এর ফলস্বরূপ হয়তো আমাকে সতর্ক করা হতো অথবা জরিমানা করা হতো।

কিন্তু এর পরিবর্তে আমার ভিসা বাতিল করা হয় এবং লুইসিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়, যেখানে আমি অন্য প্রায় একশ নারীর সঙ্গে গত তিন মাস কাটিয়েছি। আমরা একটি কক্ষে ডরমিটরির মতো বিছানায় থাকতাম।”

আশ্চর্যজনকভাবে, ক্সেনিয়ার গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে গুরুতর চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি লিয়া ফোলি বলেছেন, ক্সেনিয়া তার ব্যাগে জীববৈজ্ঞানিক উপাদান থাকার বিষয়ে কর্মকর্তাদের মিথ্যা বলেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষিত ব্যক্তি হলেও আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। ক্সেনিয়ার ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যা তার আচরণের ফলস্বরূপ কাস্টমস কর্মকর্তারা করেছেন। ভিসা কোনো অধিকার নয়, এটি একটি বিশেষ সুবিধা।”

তবে ক্সেনিয়ার আইনজীবী গ্রেগরি রোমানভস্কি বলেছেন, ক্সেনিয়া যদিও ব্যাঙের নমুনা ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, এই ঘটনার জন্য জরিমানা করা যেত এবং এটিকে একটি ছোটখাটো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যেত।

কিন্তু তার ভিসা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয় এবং তাকে আটক করা হয়, যা আইনজীবীর মতে সরকারের একটি বাড়াবাড়ি।

সরকারের নতুন অভিযোগের পরে, ফেডারেল ম্যাজিস্ট্রেট ক্সেনিয়াকে ম্যাসাচুসেটস-এ স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। ক্সেনিয়ার আইনজীবী প্রথম আটকের পরপরই ভার্মন্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস এবং জামিনের আবেদন করেন। হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের মাধ্যমে আটক ব্যক্তিকে আটকের কারণ দর্শাতে হয়।

বিচার বিভাগের আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন, ক্সেনিয়ার বিরুদ্ধে নতুন ফৌজদারি অভিযোগের কারণে এবং তাকে ICE থেকে লুইসিয়ানার রিচউড কারেকশনাল ফ্যাসিলিটিতে স্থানান্তরিত করার কারণে জামিনের আবেদনটি অকার্যকর হয়ে গেছে।

কসেনিয়ার আইনজীবীরা পাল্টা অভিযোগে জানিয়েছেন, সরকার তাকে জামিন থেকে বিরত রাখতে এবং ফেডারেল আদালতে তার আবেদনগুলো শোনা বন্ধ করতে মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয় নিচ্ছে।

কসেনিয়া তার গবেষণাগারে ফিরে যেতে চান, যেখানে তিনি একটি বিশেষ মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেন, যা টিস্যুর নমুনা ক্ষতিগ্রস্ত না করে পরিমাপ করতে পারে।

তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে এটিকে “বিপ্লবী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এটি ক্যান্সার ও আলঝাইমারের মতো রোগের গবেষণায় সহায়তা করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *