মাত্র ২৭ ডলারে হার্ভার্ডের কেনা ‘নকল’ আসলে আসল ম্যাগনা কার্টা!

হার্ভার্ড ল’ স্কুলে খুঁজে পাওয়া গেল ত্রয়োদশ শতকের ‘ম্যাগনা কার্টা’-র আসল প্রতিলিপি।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল’ স্কুলে কয়েক দশক আগে মাত্র সাতাশ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার টাকার সমান) কেনা একটি দলিলের আসল পরিচয় অবশেষে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটি ছিল ত্রয়োদশ শতকের ‘ম্যাগনা কার্টা’-র (Magna Carta) একটি দুর্লভ প্রতিলিপি।

ব্রিটেনের ঐতিহাসিকদের নতুন গবেষণায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারের পেছনে ছিলেন কিং’স কলেজ লন্ডনের মধ্যযুগীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড কার্পেন্টার। হার্ভার্ড ল’ স্কুলের অনলাইন সংরক্ষণাগারে (online archives) অনুসন্ধানের সময় তিনি এই অমূল্য দলিলটি খুঁজে পান।

অধ্যাপক কার্পেন্টার জানান, তিনি যখন হার্ভার্ড ল’ স্কুলের পান্ডুলিপি নম্বর ১৭২ -তে ক্লিক করেন, তখন একটি সাধারণ আইনের বইয়ের বদলে তার চোখে পরে ১৩০০ সালের ‘ম্যাগনা কার্টা’-র একটি আসল প্রতিলিপি।

এই আবিষ্কারে বিস্মিত হয়ে তিনি দ্রুত ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ও ‘ম্যাগনা কার্টা’ বিশেষজ্ঞ নিকোলাস ভিনসেন্টকে বিষয়টি জানান। অধ্যাপক ভিনসেন্টও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

‘ম্যাগনা কার্টা’ (Great Charter) মানবাধিকারের প্রাথমিক ঘোষণা হিসেবে পরিচিত।

এটি ইংরেজি আইনে মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই সনদটি ছিল এমন একটি দলিল যা প্রথমবারের মতো রাজার শাসনের ঊর্ধ্বে আইনের ধারণা দেয়।

বর্তমানে, সারা বিশ্বে এই দলিলটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, কারণ এটি প্রমাণ করে যে রাজা সহ সবাই আইনের অধীনে।

অধ্যাপক কার্পেন্টার বলেন, ‘আগে রাজা ইচ্ছে করলেই তার প্রজাদের বন্দী করতে পারতেন, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারতেন।

কিন্তু ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমে রাজার ক্ষমতা সীমিত করা হয়। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে, তাকে অবশ্যই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হতো।’

গবেষকদের ধারণা, হার্ভার্ডে পাওয়া এই দলিলটি ১৩০০ সালে রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের জারি করা ‘ম্যাগনা কার্টা’-র সাতটি মূল কপিতে অন্যতম।

হার্ভার্ড ল’ স্কুলের লাইব্রেরি বিষয়ক সহকারী ডিন অ্যামান্ডা ওয়াটসন ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের এই অসাধারণ আবিষ্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘হার্ভার্ড ল’ লাইব্রেরির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহগুলি যখন উজ্জ্বল গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন এমন ফল পাওয়া যায়।’

জানা যায়, হার্ভার্ডের আইন লাইব্রেরি ১৯৪৬ সালে লন্ডনভিত্তিক বই বিক্রেতা সুইট অ্যান্ড ম্যাক্সওয়েলের কাছ থেকে নিলামে দলিলটি কিনেছিল।

নিলামের ক্যাটালগে পান্ডুলিপিটিকে ‘১৩২৭ সালে তৈরি করা একটি প্রতিলিপি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যা ‘কিছুটা ঘষা এবং স্যাঁতসেঁতে’ ছিল।

লন্ডন বই বিক্রেতাদের আগে এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বৈমানিক এয়ার ভাইস মার্শাল মেইনহার্ডের কাছে ছিল, যিনি এটি উত্তরাধিকার সূত্রে ক্রীতদাস-প্রথা বিরোধী দুই প্রচারকের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

অধ্যাপক ভিনসেন্ট জানান, ‘এই দলিলের উৎস সত্যিই অসাধারণ।

বর্তমান বিশ্বে স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক ঐতিহ্যের ধারণা নিয়ে যখন নানা সমস্যা চলছে, তখন এর এমন একটি উৎস খুঁজে পাওয়া বিস্ময়কর।’

অধ্যাপক কার্পেন্টার জানান, দলিলের হস্তাক্ষর এবং প্রথম লাইনের শুরুতে বড় ‘E’ অক্ষরটি (যা ‘এডওয়ার্ডাস’-এর প্রতীক) সহ বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এর আসলত্ব প্রমাণ করে।

এছাড়াও, দলিলের আকার (৪৮.৯ সেন্টিমিটার x ৪৭.৩ সেন্টিমিটার) আগে থেকে জানা আসল প্রতিলিপিগুলোর সঙ্গে মিলে যায়।

হার্ভার্ড ল’ স্কুল থেকে পাওয়া অতিবেগুনি রশ্মির ছবি এবং অন্যান্য চিত্র ব্যবহার করে দলিলের লেখাগুলো অন্যান্য আসল কপিতে থাকা লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

এর মাধ্যমেই এর সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে।

বর্তমানে, এই ঐতিহাসিক দলিলের ভবিষ্যৎ কী হবে?

অধ্যাপক কার্পেন্টার জানিয়েছেন, আগামী জুন মাসে হার্ভার্ডে এই আবিষ্কার উদযাপন করা হবে।

এরপর, হার্ভার্ডের সংগ্রহশালায় ‘সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন’ হিসেবে এটিকে জনসাধারণের জন্য প্রদর্শিত হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *