হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন বিষয়ক আলোচনা কি সত্যিই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী আলোচনা এবং গবেষণাকে দমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবসময় তাদের মুক্তচিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে থাকে।
সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ডে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের উপর বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের ঘটনা ঘটে থাকে, যা কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এমনকি, ইসরায়েলি নীতির সমালোচনামূলক আলোচনা বা গবেষণাকে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন দ্বিমুখী নীতির কারণে মুসলিম, আরব ও ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করেন।
হার্ভার্ডের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিন বিষয়ক বিভিন্ন প্রোগ্রাম, গবেষণা এবং শিক্ষকতা কার্যক্রমও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে এক শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের তথ্য ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করার অভিযোগও রয়েছে। এর ফলে, ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে কথা বলা শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার হতে হচ্ছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপের পেছনে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়, যারা ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত।
সমালোচকদের মতে, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করেন এবং ফিলিস্তিন বিষয়ক আলোচনাকে দমিয়ে রাখতে চান। এর ফলস্বরূপ, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ডে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
হার্ভার্ডের এই নীরবতা এমন এক সময়ে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যখন গাজায় মানবিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মাসের মধ্যে গাজায় মানবিক সংকট সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাবার, ওষুধ ও ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানকার মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হার্ভার্ডের মতো একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আচরণ মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এর ফলে, ফিলিস্তিনের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা এবং তাদের অধিকারের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে আলোচনা থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা