দাসত্বের ছবি: হার্ভার্ডের ঐতিহাসিক লড়াইয়ে জয়, ফিরছে ছবি!

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত ছবি হস্তান্তর: দাসত্বের ইতিহাসের ক্ষতচিহ্ন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষা ও গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, অবশেষে তাদের সংগ্রহে থাকা একটি বিশেষ ছবি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবিগুলো ১৮৫০ সালে তোলা, যা সেই সময়ের ক্রীতদাসদের আদি ছবি হিসেবে পরিচিত।

এই ছবিগুলো এখন থেকে দক্ষিণ ক্যারোলিনার আন্তর্জাতিক আফ্রিকান আমেরিকান জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হবে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে তেরো বছর ধরে চলা এক দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ফলস্বরূপ।

তামারা ল্যানিয়ার নামের এক নারীর দায়ের করা মামলার মাধ্যমে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ল্যানিয়ার ছবিগুলোতে থাকা রেন্টি নামের এক ক্রীতদাসের বংশধর।

রেন্টির সাথে তার মেয়ে ডেলিয়াও ছিলেন ছবিতে। ল্যানিয়ারের দাবি ছিল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অন্যায়ভাবে এই ছবিগুলো নিজেদের কাছে রেখেছে। ছবিগুলো তাদের অনুমতি ছাড়া তোলা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে তাদের সম্মানহানি হয়েছে।

এই মামলার মাধ্যমে দাসত্বের ইতিহাসের এক গভীর ক্ষতচিহ্ন উন্মোচিত হয়। ছবিগুলো তৈরি করেছিলেন হার্ভার্ডের অধ্যাপক লুই অ্যাগাসিজ, যিনি সেই সময় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্ব প্রচার করতেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন, আফ্রিকানরা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে নিচু স্তরের এবং তাদের ছবি তুলে তিনি সেই তত্ত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। রেন্টি ও ডেলিয়াকে নগ্ন করে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা ছিল তাদের প্রতি চরম অবমাননাকর আচরণ।

মামলার শুনানিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে ছবিগুলোর মালিকানা দাবি করে। তবে, আদালত ল্যানিয়ারের আবেগের ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিয়েছিল। অবশেষে, উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যার ফলে ছবিগুলো জাদুঘরে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পর্যন্ত ল্যানিয়ারের পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।

এই ঘটনার মাধ্যমে কেবল ছবি হস্তান্তরই নয়, বরং দাসত্বের ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি নতুন করে সামনে এসেছে। ল্যানিয়ার এই জয়কে দাসত্বের শিকার হওয়া মানুষের বংশধরদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, “এই ছবিগুলো, যা আমাদের সম্মান কেড়ে নিয়েছিল, এখন তাদের সঠিক স্থানে ফিরে যাবে, যেখানে তাদের গল্প বলা হবে এবং তাদের মানবিকতা পুনরুদ্ধার করা হবে।”

এই ঘটনা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের একটি অন্ধকার দিককে তুলে ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদিও ছবিগুলো হস্তান্তরে রাজি হয়েছে, তবে তাদের সম্পূর্ণ দায় স্বীকার না করা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এই ঘটনা ইতিহাস এবং নৈতিকতার এক জটিল মোড় উন্মোচন করে, যা আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথ বেছে নিতে উৎসাহিত করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *