হার্ভার্ড-ট্রাম্প সংঘাত: গবেষণার ভবিষ্যৎ কি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা খাতে অর্থায়ন হ্রাসের ফলে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এক কঠিন লড়াইয়ে নেমেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে জীবনদায়ী গবেষণাগুলোর ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শিক্ষাখাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা কিছু ‘নাগরিক অধিকার’ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই পদক্ষেপ তাদের একাডেমিক স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তাদের মতে, এটি মূলত মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডেভিড ওয়াল্ট-এর গবেষণাগারটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যেমন – এএলএস (ALS) বা অ্যামিওট্রপিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস এর প্রাথমিক শনাক্তকরণ প্রযুক্তি তৈরির কাজ করে। কিন্তু অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার গবেষণার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

ওয়াল্ট-এর মতে, এই ধরনের অর্থায়ন বন্ধ হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি ব্যাহত হবে এবং এর ফলস্বরূপ অনেক মানুষের জীবনহানি হতে পারে। ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ এবং সংক্রামক ব্যাধিগুলোর গবেষণা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, ফেডারেল সরকারের এই অর্থ বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে তাদের একাডেমিক স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ এনেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এর ফলে শুধু তাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা কর্মচারী নয়, বরং বৃহত্তর মার্কিন জনতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হার্ভার্ডের পাবলিক হেলথ স্কুল ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে তাদের মোট তহবিলের ৪৬ শতাংশ অর্থ পেয়ে থাকে। অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে তারা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।

কর্মী ছাঁটাই, নতুন পিএইচডি প্রোগ্রামের সিট সংখ্যা কমানো এবং অফিসের জন্য দুটি ভবনের লিজ বাতিল করার মতো পদক্ষেপ নিতে তারা বাধ্য হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণা খাতে অর্থায়নের অভাবে ভবিষ্যতে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অনেক পিছিয়ে পড়বে।

এমন পরিস্থিতিতে চীন এবং ইউরোপের দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা বাড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন তাদের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। শুধু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এই ধরনের বাধা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে মারাত্মক সংকট তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *