হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির দায়িত্ব পেয়েছেন অভিজ্ঞ বিচারক অ্যালিসন ডেল বারোজ। সরকারি তহবিল স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হার্ভার্ডের করা এই মামলায় বিচারক বারোজের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি এর আগেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলায় রায় দিয়েছেন।
শুনানি চলাকালীন বিচারক বারোজ মন্তব্য করেন, “জীবনের প্রায় ৯৫ শতাংশই হলো নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকা।” বোস্টনের একটি আদালতে এই মামলার শুনানিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ছে।
জানা গেছে, আদালতের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রথমে জুমের মাধ্যমে শুনানি শুরু করা যায়নি। পরে আইনজীবীদের প্রস্তুত ঘোষণার পর বিচারক জুম ছাড়াই শুনানি শুরু করেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই তহবিল অত্যন্ত জরুরি। আইনজীবীরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, বিচারক বারোজের এই মামলার দায়িত্বে থাকা উচিত, কারণ তিনি এর আগে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সংস্থার ফেডারেল গবেষণা তহবিল সংক্রান্ত মামলায়ও যুক্ত ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইব বলেন, “বিচারক বারোজ একজন অসাধারণ আইনজ্ঞ এবং তিনি সকলের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।” বিচারক বারোজ শুনানিতে আগামী ২১ জুলাই মৌখিক যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেছেন।
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ২০১৪ সালে অ্যালিসন ডেল বারোজকে জেলা আদালতের বিচারক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এর আগে তিনি ‘নটার ম্যাকলেনন অ্যান্ড ফিশ এলএলপি’ নামক একটি আইন সংস্থায় কাজ করতেন।
বারোজ ১৯৮৮ সালে ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮০-এর দশকে ক্যাপিটল হিলের একটি পাব-এ ওয়েট্রেস এবং ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান ম্যাথিউ ম্যাকহিউয়ের হয়ে কংগ্রেসনাল ইন্টার্ন হিসেবেও কাজ করেছেন।
বিচারক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি প্রায় ১৭ বছর ধরে ফেডারেল সরকারের হয়ে ফৌজদারি মামলার তদন্ত করেছেন। মাদক, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং প্রযুক্তি বিষয়ক জটিল মামলাগুলো ছিল তাঁর কাজের প্রধান অংশ।
বারোজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি ডোনাল্ড স্টার্লিং বলেন, “অ্যালিসন ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, ভারসাম্যপূর্ণ, বুদ্ধিমান এবং নীতিবান।”
বিচারক হিসেবে বারোজের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলার মধ্যে রয়েছে: ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর সরকারের নজরদারী ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রণীত ‘প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট’-এর সঙ্গে জড়িত একটি মামলা; একটি জটিল অফশোর মানি লন্ডারিং স্কিম; বৃহৎ আকারের টেলি-মার্কেটিং জালিয়াতি; এবং একটি সহিংস মাদক পাচার চক্রের বিরুদ্ধে মামলা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিচারক বারোজের সম্পর্ক নতুন নয়। ২০১৯ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বপক্ষে রায় দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় বাতিল করে দেয়।
বিচারক হিসেবে বারোজ ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন। ২০১৭ সালে মুসলিম প্রধান সাতটি দেশের নাগরিকদের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি এর বিরোধিতা করে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এছাড়াও, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় অনলাইন ক্লাস-নির্ভর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশনার বিরুদ্ধে হার্ভার্ড ও এমআইটি’র করা একটি মামলারও তিনি তদারকি করেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল নিয়ে এই আইনি লড়াই এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন