হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, মার্কিন সরকারের সঙ্গে তীব্র বিতর্কের জের।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক এখন এক জটিল মোড়ে। বিভিন্ন নীতিগত বিতর্কের জেরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির টানাপোড়েন চলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার পরেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগ এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে, জনস্বাস্থ্য বিভাগে এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে। সেখানকার অধ্যাপকগণ যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঐতিহ্যপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায়, তাদের বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে, হার্ভার্ডকে তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিষয়ক ভাইস প্রভোস্ট জন শ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহকর্মীদের কাছে একটি ইমেইল পাঠান। সেখানে তিনি কোনো প্রকার তহবিল বন্ধের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্পনসর্ড প্রোগ্রাম অফিসে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন।
এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলো যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং গবেষকদের সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও তিনি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, হার্ভার্ডের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস অনুষদের অধ্যাপকগণকে জানানো হয়েছে যে, খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে হার্ভার্ড প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই বিতর্কের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স-মুক্তের সুবিধাও বাতিল হতে পারে। এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও একটি উদ্বেগের কারণ।
বর্তমানে হার্ভার্ডে ২৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বিদেশি।
হার্ভার্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক গ্রেগরি ম্যানকিউ জানান, “যদি এই ট্যাক্স আসে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো না কোনো খাতে খরচ কমাতে হবে। আমাদের প্রধান কাজ হলো শিক্ষাদান ও গবেষণা। এখন প্রশ্ন হলো, কম গবেষণা নাকি কম শিক্ষাদানের মাধ্যমে সমাজের ভালো হবে?”
এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি হার্ভার্ডকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল একটি আইনি লড়াইয়েও ফেলতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তারা রিপাবলিকান দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন দুইজন অ্যাটর্নিকে নিয়োগ দিয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলেন রবার্ট হার, যিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গোপন নথি বিষয়ক তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অপরজন হলেন উইলিয়াম বার্ক, যিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।
তবে, এমন পরিস্থিতিতেও হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা সম্ভবত এমন একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে, যা আইনি লড়াই এড়িয়ে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্র এবং স্ট্যাটসন ইউনিভার্সিটি ল’ স্কুলের অধ্যাপক পিটার লেক বলেন, “ট্রাম্প সম্ভবত আলোচনার টেবিলে আসার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন। সম্ভবত তারা মনে করছেন, ‘যেমনকে তেমন’ নীতি অনুসরণ করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।”
এই বিতর্কের কারণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেকে মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা উচ্চশিক্ষার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।