আতঙ্কে হার্ভার্ড! ট্রাম্পের হুমকিতে কি বন্ধ হবে শিক্ষা?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ট্রাম্প প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ৩৭৪তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। কিন্তু এই বছর অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে ফেডারেল তহবিল কর্তন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তি সীমিত করা এবং ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের উপর কড়া নজরদারি।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্রাহাম ভার্গিস। এছাড়া, বিশেষ দিনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বাস্কেটবল তারকা করিম আব্দুল-জাব্বার এবং সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ানে আমানপুর।

বক্তারা হার্ভার্ডের এই সংকটকালে তাদের দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করেন। করিম আব্দুল-জাব্বার বিশেষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবারের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, যখন একটি স্বৈরাচারী সরকার হার্ভার্ডকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল, তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, তখন ড. গারবার অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের সঙ্গে ফেডারেল সরকারের প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিলের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল গবেষণা অনুদান বাতিল করা হয়।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমনকী, হার্ভার্ডের ট্যাক্স-মুক্ত স্ট্যাটাস নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনা হোক।

এই পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তি বন্ধের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছে।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপগুলো অযৌক্তিক এবং বেআইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সরকারের এই ধরনের হস্তক্ষেপ এবং বিজ্ঞান ও চিকিৎসা গবেষণার উপর আঘাত অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।”

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভের অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে আমেরিকান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের “জাতিগত বিদ্বেষমূলক সহিংসতা ও হয়রানি” থেকে রক্ষা করা হবে।

উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন।

গত বছর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা “ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এবারও সমাবর্তনের আগে কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল।

হার্ভার্ডের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভিক্টর ওয়ালিস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা এবং সাংবাদিকদের হত্যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি কঠিন সময় পার করছে। একদিকে যেমন তাদের শিক্ষা ও গবেষণার মান বজায় রাখতে হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *