ফান্ডিং বন্ধের হুমকি: কলম্বিয়ার পর এবার কি হার্ভার্ড?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জেরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে, একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে হওয়া প্রতিবাদ।

জানা গেছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রায় ৮.৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান এবং চুক্তি পর্যালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। এর আগে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

উভয় ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ (anti-Semitism) নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। তবে সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন দমনের একটি কৌশল।

গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিক্রিয়ায়, ট্রাম্প প্রশাসন একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই ধরনের বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এই আদেশের অধীনে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যারা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের প্রতি নমনীয় ছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ‘হার্ভার্ড আউট অফ অকুপাইড প্যালেস্টাইন’ (HOOP) নামে একটি সংগঠন গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, অ্যালান গারবার, এই বিক্ষোভের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করার আহ্বান জানান। পরবর্তীতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।

তবে এই বিষয়ে দুই পক্ষের বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা দাবি করে যে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে, যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কেবল তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে।

অন্যদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানাতে গিয়ে একটি একাডেমিক ভবন দখল করা হয়।

এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ডেকে পাঠায় এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর ফলস্বরূপ, ফেব্রুয়ারিতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল বাতিল করা হয়।

এরপর, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কয়েকজনের ভিসা বাতিল করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে গবেষণা এবং শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট গারবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই তহবিল বন্ধ হলে জীবন রক্ষাকারী গবেষণা ব্যাহত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে।

এই ঘটনার ধারাবাহিকতায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *