মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তৈরি হওয়া বিতর্কের বিষয়টি এখন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে রাজি ছিল না। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
২০২০ সালের মে মাসে, তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তালিকা চেয়ে পাঠায়। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা তথ্য দিতে গড়িমসি করছে।
এর ফলস্বরূপ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তির অনুমতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তবে, আদালতের হস্তক্ষেপে সেই সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিচয় সম্পর্কে জানাতে চাইছে না। এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩১ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীর বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
ট্রাম্পের মতে, এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া প্রয়োজন, যাতে তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
অন্যদিকে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরবরাহ করেছে। তারা আরও জানায়, কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত কিছু তথ্য চাওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
এই বিষয়ে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দেশটির স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security)। তাদের মতে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্ত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP)-এর অনুমোদন নিতে হয়। এই প্রোগ্রামের ডেটাবেজে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভিসাসংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
এর মধ্যে ঠিকানা, কোর্স, গ্রেড, চাকরির বিবরণ, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্ত করার অনুমতি পেয়ে আসছে। এই অনুমোদনের অংশ হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সরকারকে জানাতে হয়।
প্রতি দুই বছর অন্তর SEVP-এর অনুমোদন নবায়ন করতে হয়। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা নিয়মিতভাবে কর্তৃপক্ষের সব নিয়মকানুন মেনে চলে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে, সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ভিসা পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করতে হয়।
এর মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তথ্য চেয়েছে। স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, SEVP প্রোগ্রামটি বৈধ বিদেশি শিক্ষার্থী বা এক্সচেঞ্জ ভিজিটরদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এই প্রোগ্রামটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের গ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ৫,২০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর তথ্য সরবরাহ করেছে। তবে, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ জানায়, হার্ভার্ডের দেওয়া তথ্য তাদের চাহিদার সম্পূর্ণ নয়।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের মতে, তারা সরকারের নিয়ম মেনেই তথ্য দিয়েছে।
বর্তমানে, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্ক চলছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
তবে, তারা তাদের কাছে থাকা সব তথ্য দিতে পারবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা