বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টাইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মামলাটি আবার নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে। এই ঘটনা #MeToo আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যেখানে নারীরা তাদের উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে এই মামলার পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হতে চলেছে, যা বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
২০২০ সালে উইনস্টাইনকে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আপিল আদালত পরে সেই রায় বাতিল করে দেয়।
আদালতের মতে, বিচারক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এমন কিছু সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করেছিলেন যা মামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ছিল না এবং তা “অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট” ছিল। এবার তাই নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
নতুন করে সাজানো এই মামলাটি সম্ভবত আগের চেয়ে সংক্ষিপ্ত হবে, তবে এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের মামলায় যে অভিযোগগুলো ছিল না, এবার সেই ধরনের একটি নতুন অভিযোগ যুক্ত করা হয়েছে।
উইনস্টাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এমন একজন নারীর বক্তব্যও এবার শোনা হবে, যিনি আগের বিচারে সাক্ষী ছিলেন না।
উইনস্টাইনের আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, নতুন করে অভিযোগ যুক্ত করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের মতে, প্রসিকিউটররা ইচ্ছাকৃতভাবে এই অভিযোগগুলো প্রথম বিচারের সময় গোপন রেখেছিলেন, যাতে প্রয়োজনে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায়।
এদিকে, উইনস্টাইন শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। তার দাবি, অভিযোগকারীরা যা বলছেন, তা সত্য নয়।
তার আইনজীবীরা মনে করছেন, আগের বিচারের পাঁচ বছর এবং #MeToo আন্দোলনের উত্থানের প্রায় আট বছর পর, বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো খানিকটা বদলেছে।
উইনস্টাইনের স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
গত জানুয়ারিতে তিনি আদালতকে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কারণ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি সম্ভবত বসন্তকাল পর্যন্ত জীবিত নাও থাকতে পারেন।
আদালতে শুনানির আগে বিচারক কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ একজন সাক্ষীকে ডাকার অনুমতি দিয়েছেন।
এছাড়াও, প্রথম বিচারের একজন অভিযোগকারীকে তার সাক্ষ্যে “জোরপূর্বক” শব্দটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও আগে তিনি প্রথম-ডিগ্রি ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
তবে, বিচারক উইনস্টাইনের অভিযোগকারীদের “সারভাইভার” হিসেবে উল্লেখ করার পরিবর্তে “অভিযোগকারী সাক্ষী” হিসেবে উল্লেখ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনজন নারী। তাদের অভিযোগ, উইনস্টাইন তাদের উপর বিভিন্ন সময়ে যৌন নির্যাতন করেছেন।
তাদের মধ্যে একজন জানান, ২০০৬ সালে উইনস্টাইন তাকে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করেছিলেন। অন্য একজন জানান, ২০১৩ সালে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
তৃতীয় জনও ২০০৬ সালে একটি হোটেলের কক্ষে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
উইনস্টাইনের এই মামলার রায় এখন সবার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নতুন করে যাচাই করা হবে।
এই মামলার ফল ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলার বিচার এবং সমাজে নারী অধিকারের ধারণা কতটা শক্তিশালী হয়, সে ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			