হেস্টিংস-এর বিস্ময়কর পুনর্জন্ম: পুরনো শহরে নতুন আলো!

এক সময়ের পশ্চাদপদ একটি উপকূলীয় শহর, যা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে—হ্যাঁ, বলছি ইংল্যান্ডের হেস্টিংসের কথা। একাদশ শতকে হেস্টিংসের যুদ্ধ (Battle of Hastings)-এর কথা আজও মানুষের মনে আছে, তবে সময়ের সাথে সাথে শহরটি অনেক বদলেছে।

ভিক্টোরিয়ান যুগে একসময় বেশ জনপ্রিয়তা ছিল এই শহরের, কিন্তু পরবর্তীতে যেন একটু মলিন হয়ে গিয়েছিল তার জৌলুস। তবে বর্তমানে হেস্টিংস এবং এর প্রতিবেশী শহর সেন্ট লিওনার্ডস-অন-সি-এর পুনর্জীবন সত্যি প্রশংসার দাবিদার।

এখানে এখন অসংখ্য স্বাধীন দোকান, রেস্তোরাঁ, পাব এবং ছোট ছোট হোটেল গড়ে উঠেছে।

বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে হেস্টিংসের সমুদ্রের নীল জলরাশি, সৈকতের আকর্ষণীয় দৃশ্য আর উৎসবমুখর পরিবেশ পর্যটকদের মন জয় করে। মে মাসের শুরুতে ‘জ্যাক ইন দ্য গ্রিন’ উৎসবের সময় পুরো শহর মেতে ওঠে লোকনৃত্য, প্যারেড আর নানা আয়োজনে।

শীতকালেও এখানকার পাবগুলো উষ্ণ থাকে, আর সূর্যাস্তের দৃশ্য হয় আরও মনোমুগ্ধকর।

শহরটি ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল পুরনো শহর (Old Town)। এখানে কাঠের ফ্রেমের পাব এবং পুরনো জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে।

আপনি রবার্টস রামেজ-এর মতো দোকানে সিরামিক ও অন্যান্য সুন্দর জিনিসপত্র দেখতে পারেন। এরপর হেঁটে যাওয়া যেতে পারে ‘দ্য স্টেড’-এ।

হেস্টিংস তার প্রাচীন মৎস্য ব্যবসার জন্য সুপরিচিত। এখানে এখনো বিকেলে জেলেদের রঙিন নৌকাগুলো তীরে ভিড়তে দেখা যায়।

পুরনো শহর থেকে কাছেই রয়েছে ‘নেট শপ’—ঐতিহ্যপূর্ণ কাঠের তৈরি ঘর, যেখানে জেলেরা তাদের জাল (নেট) সংরক্ষণ করেন। এই ঘরগুলো তাদের বিশেষ নকশার জন্য গ্রেড-২ তালিকাভুক্ত।

হেস্টিংস সমসাময়িক গ্যালারিতে (Hastings Contemporary gallery) বিভিন্ন প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারেন।

হেস্টিংস পিয়ারে (Hastings Pier) অবস্থিত ‘সাম্ফায়ার সৌনা’ (Samphire Sauna)-তে কিছুক্ষণ সময় কাটানো যেতে পারে, যেখান থেকে সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।

যারা একটু দূরে ঘুরতে যেতে চান, তারা ছয় মাইল দূরে অবস্থিত পেট লেভেল সৈকতে (Pett Level beach) যেতে পারেন। এখানে হেঁটে বা গাড়িতে যাওয়া যেতে পারে।

আশেপাশের পাহাড়গুলোতে রয়েছে অনেক আঙুর বাগান। টিলিংহাম (Tillingham) এদের মধ্যে অন্যতম।

আপনি ‘ভাইন অ্যান্ড কান্ট্রি’-র (Vine & Country) সঙ্গে এখানকার চার্লস পামার এবং ওস্টব্রুকের মতো স্থানীয় বাগানগুলোতে যেতে পারেন এবং সেখানকার ওয়াইনের স্বাদ নিতে পারেন।

খাবারের জন্য হেস্টিংস এবং সেন্ট লিওনার্ডস-এ বেশ কয়েকটি ভালো বিকল্প রয়েছে।

হেস্টিংসের ‘দ্য স্টেড’-এর কাছাকাছি মাছের দোকান থেকে তাজা খাবার সংগ্রহ করা যেতে পারে।

রাতের খাবারের জন্য ‘ম্যাগি’স’-এর মতো পুরনো ক্যাফেতে যেতে পারেন, যেখানে বসে সি-গালদের ওড়ার দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

‘দ্য ক্রাউন’ পাব-এ স্থানীয়ভাবে তৈরি বিয়ার পাওয়া যায়।

সেন্ট লিওনার্ডসে ‘হাফ ম্যান হাফ বার্গার’-এর মতো জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টেও ঢুঁ মারতে পারেন। তাছাড়া, সম্প্রতি খোলা ‘বে’টে’ (Bayte)-তে সিজনাল মেনু ও আরামদায়ক পরিবেশে খাবার উপভোগ করা যেতে পারে।

প্রাতরাশের জন্য ‘স্লিপার বেগল’ (Sleeper Bagel)-এর নানা পদের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের খাবার।

থাকার জন্য এখানে কিছু ভালো জায়গা আছে।

পুরনো শহরের কাছেই ১৪ শতকের পুরনো একটি বাড়ি, যা এখন একটি বুটিক বিএন্ডবি-তে (Boutique B&B) রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে নিজস্ব স্পা-ও রয়েছে।

এছাড়া, ‘ডগহাউস ইন’-এর (Doghouse Inn) ঘরগুলোও বেশ জনপ্রিয়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *