ইসরায়েল বিরোধীতার শাস্তি জানাতে অস্বীকার, মার্কিন কংগ্রেসে হাভার্ড প্রেসিডেন্টের উপর ক্ষোভ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ নিয়ে দেশটির কংগ্রেসে এক শুনানিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই শুনানিতে অংশ নেওয়া কলেজ প্রেসিডেন্টদের মধ্যে হেভারফোর্ড কলেজের প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি রেমন্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতারা।

অভিযোগ উঠেছে, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কারণে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

কংগ্রেসের শিক্ষা ও কর্মীবাহিনী বিষয়ক কমিটিতে শুনানিতে রেমন্ডের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির জেফরি আর্মস্ট্রং এবং ডিপল ইউনিভার্সিটির রবার্ট ম্যানুয়েলও উপস্থিত ছিলেন। তবে, হেভারফোর্ড কলেজের প্রেসিডেন্টকেই মূলত নিশানা করা হয়।

রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেন, রেমন্ড কেন শিক্ষার্থীদের শাস্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে চাইছেন না। তাদের মতে, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি ফেডারেল তহবিল পাওয়ার যোগ্য কিনা, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

মিসৌরির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বব অন্ডার বলেন, “আপনি তথ্য দিতে অস্বীকার করতে পারেন, তবে আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে এমন প্রতিষ্ঠান করদাতাদের অর্থ পাওয়ার যোগ্য নয়।”

শুনানিতে রিপাবলিকানদের মূল লক্ষ্য ছিল, দেশটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইহুদি-বিদ্বেষ কতটা গভীরে প্রোথিত, তা তুলে ধরা। বিশেষ করে গত ৭ অক্টোবর হামাস-এর ইসরায়েল আক্রমণের পর এবং ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে, শুনানিতে ডেমোক্র্যাটরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের শুনানি বৈষম্য দূরীকরণে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না।

অধিকাংশ প্রেসিডেন্টই তাদের ভুলত্রুটি স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। রেমন্ড ও ম্যানুয়েল তাদের কিছু দুর্বলতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।

অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট আর্মস্ট্রং বলেন, “আমাদের আরও ভালো করতে হবে।”

শুনানিতে হেভারফোর্ড কলেজের প্রেসিডেন্ট রেমন্ড জানান, তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সংখ্যা প্রকাশ করেন না। তিনি স্বীকার করেন যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।

নিউইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এলিস স্টেফনিক, যিনি এর আগে হার্ভার্ড ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করে তাদের পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছিলেন, রেমন্ডের এই ভূমিকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, “হেভারফোর্ড কলেজের প্রেসিডেন্ট, আপনার অবস্থানে এমন অনেকে ছিলেন, যারা সোজা-সাপ্টা প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদে নেই।”

ডিপল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টকে ফিলিস্তিনপন্থীদের একটি বিক্ষোভের ব্যবস্থাপনার বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ১৭ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চত্বর দখল করে রেখেছিল, যার ফলে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছিল।

কর্তৃপক্ষ পরে ওই স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় এবং তাদের কাছ থেকে ছুরি, গুলি চালানোর বন্দুকসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করে।

ইলিনয়ের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মেরি মিলার জানতে চান, ভবিষ্যতে যদি আবার এ ধরনের বিক্ষোভ হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দ্রুত ব্যবস্থা নেবে?

জবাবে ম্যানুয়েল জানান, “হ্যাঁ।”

অন্যান্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও শাস্তির তথ্য প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া কলেজগুলোর জন্য তহবিল বন্ধের প্রস্তাব করেন। তাদের মতে, ফেডারেল তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ইহুদি-বিদ্বেষ বিষয়ক একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে চিহ্নিত কলেজগুলোর জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের অনুদান স্থগিত করেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত কলেজগুলোর মধ্যে হার্ভার্ড, কলম্বিয়া এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল।

হার্ভার্ড বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা করছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *