হাওয়াইয়ে দাবানলের ঝুঁকি কমাতে ‘অগ্নিনিরাপদ নির্মাণ সংস্থা’র পথে বাসিন্দারা।
প্রকৃতির রুদ্র রূপের সাক্ষী থেকেছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। গত বছরের ভয়াবহ দাবানলে লহাইনা শহর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
এরপর সেখানকার বাসিন্দারা ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় এড়াতে এক নতুন পথে হাঁটছেন। তাঁরা ‘অগ্নিনিরাপদ নির্মাণ সংস্থা’ (Firewise USA) নামের একটি প্রকল্পের অধীনে একত্রিত হয়ে নিজেদের এলাকাকে অগ্নিনিরাপদ করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, ঘরবাড়ির আশেপাশে শুকনো ঘাস, ঝোপঝাড় এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ সরিয়ে একটি ‘অগ্নিরোধী পরিবেশ’ (defensible space) তৈরি করা, যাতে আগুন দ্রুত ছড়াতে না পারে।
হাওয়াইয়ের কয়েকটি অঞ্চলের বাসিন্দারা, যেমন- কুলা, কাহিকিনুই, ওয়াইকোলোয়া ভিলেজ এবং কাওয়াইহাই ভিলেজের মানুষজন এই কাজে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছেন।
তাঁরা সম্মিলিতভাবে তাঁদের এলাকার ঝুঁকি বিশ্লেষণ করছেন এবং কীভাবে তা কমানো যায়, সেই পরিকল্পনা তৈরি করছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও প্রতিবেশীরা একসঙ্গে মিলে জঞ্জাল পরিষ্কার করছেন, যা আগে হয়তো তাঁরা সেভাবে গুরুত্ব দেননি।
কাহিকিনুই এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার করে ১২ টনের বেশি বর্জ্য অপসারণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফায়ার প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন (NFPA) নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই ‘অগ্নিনিরাপদ নির্মাণ সংস্থা’র ধারণাটি নিয়ে কাজ করছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে তাঁরা জানতে পারেন কীভাবে তাঁদের এলাকাকে আগুনের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো যায়।
হাওয়াইয়ের প্রায় ২৫০,০০০ একর অব্যবহৃত কৃষি জমি রয়েছে। এখানকার অনেক বাড়ি বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।
এখানকার জনপদগুলোতে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা থাকার কারণেও আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হাওয়াই ওয়াইল্ডফায়ার ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (HWMO)-এর কো-নির্বাহী পরিচালক নানি বাররেত্তো বলেন, “আগুন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো নয়।
এর বিস্তার নির্ভর করে সেখানে কী পরিমাণ দাহ্য পদার্থ রয়েছে তার ওপর। তাই, এর মোকাবিলায় আমাদের অনেক কিছু করার আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন এবং জমির ভুল ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো দায়ী। হাওয়াইয়ের মতো এমন অনেক জনপদ রয়েছে, যেখানে আগে কখনো দাবানলের তেমন ঝুঁকি ছিল না, কিন্তু বর্তমানে সেখানেও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ঘরের কাছাকাছি স্থানে শুকনো ঘাস, লতাপাতা এবং অন্যান্য সহজে আগুন লাগতে পারে এমন জিনিস সরিয়ে ফেলতে হবে।
বাড়ির আশেপাশে ১০০ ফুটের মধ্যে এমন কোনো উপাদান রাখা যাবে না, যা দ্রুত আগুন ধরাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র ফায়ার ব্রেক তৈরি করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
কারণ, শক্তিশালী বাতাসের কারণে আগুনের ফুলকি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে।
তাই, ঘরগুলোকেও অগ্নিরোধী করতে হবে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
এই কাজে অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন।
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু মানুষ সচেতন হলেও, অনেকেই তাঁদের কাজটি নিয়মিত করেন না। এছাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের মতো কিছু পদক্ষেপের জন্য অনেক খরচ হতে পারে।
হাওয়াই ওয়াইল্ডফায়ার ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (HWMO) এই ক্ষেত্রে কিছু আর্থিক সহায়তা করে থাকে।
কাহিকিনুইকে ডাম্পার সার্ভিসের জন্য প্রায় ৫,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশী টাকা) অনুদান দেওয়া হয়েছিল।
ওয়াইকোলোয়া ভিলেজকে গাছ কাটার জন্য একটি চিপার ভাড়া করতেও সাহায্য করা হয়েছিল।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মানুষ তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চাইছে।
এটি একটি দারুণ দৃষ্টান্ত, যা বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
আমাদের দেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস