হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতি: কানাকা মাওলিদের জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্য।
সাদা বালুকাময় সৈকত আর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের বাইরেও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের রয়েছে এক গভীর ইতিহাস ও সংস্কৃতি। কানাকা মাওলি, অর্থাৎ হাওয়াই দ্বীপের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।
সম্প্রতি, ‘লস্ট কালচারস: লিভিং লেগাসিস’ নামক একটি পডকাস্টে হাওয়াই দ্বীপের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয় কয়েকজন মানুষের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে সেই পডকাস্টের আলোকে হাওয়াই দ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।
হাওয়াই দ্বীপের সংস্কৃতি শুধু পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের ইতিহাস, এবং প্রকৃতির প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ এই দ্বীপগুলোকে বিশেষত্ব এনে দিয়েছে।
হাওয়াইয়ের স্থানীয় ঐতিহাসিক ইভান মোকুয়াহি হেইস-এর মতে, “হাওয়াই এমন একটি জায়গা যেখানে শূন্যতা পূরণ করার ক্ষমতা রয়েছে। ভাঙা মনকে সুস্থ করে তোলার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এই দ্বীপের।”
এখানকার মানুষের কাছে ‘আইনা’, অর্থাৎ ভূমি ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। হাওয়াই ইতিহাসের অধ্যাপক ড. জে. উলুওহি হপকিন্স-এর মতে, “আমাদের বংশানুক্রমিক ইতিহাস রয়েছে যা বলে যে আমরা এই ভূমি থেকে জন্ম নিয়েছি, এবং এই ভূমিই আমাদের পূর্বপুরুষ।”
এই ধারণাই তাদের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি, যেখানে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসাই প্রধান।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে হাওয়াই দ্বীপের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে পরিবর্তন আসে। হপকিন্স ব্যাখ্যা করেন, “হাওয়াই দ্বীপের প্রধানরা চেয়েছিলেন এমন একটি সরকার গঠন করতে যা অন্যান্য দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং তাদের সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে।”
যদিও হাওয়াইয়ের আদিবাসী মানুষ জমির মালিকানার ধারণা পছন্দ করতেন না, তবুও বিদেশি শক্তির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উনিশ শতকে আমেরিকান মিশনারিদের আগমন, চিনি শিল্পের বিস্তার এবং কুইন লিলিউওকালানির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মতো ঘটনাগুলো হাওয়াই দ্বীপের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
কুইন লিলিউওকালানি তার ক্ষমতা হারানোর সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রীর অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, হাওয়াই দ্বীপের সংস্কৃতি আজও টিকে আছে, বিশেষ করে ‘হুলা’ নৃত্যের মাধ্যমে।
হুলার শিক্ষক হোকুলানি হোল্ট-এর মতে, “হুলা হলো কথার দৃশ্যমান রূপ। শব্দ ছাড়া হুলা হয় না।”
হুলা শুধু একটি নৃত্যকলা নয়, এটি ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
হাওয়াই দ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, ‘লস্ট কালচারস: লিভিং লেগাসিস’ পডকাস্টটি শোনা যেতে পারে।
পডকাস্টটি অ্যাপল, স্পটিফাই, অ্যামাজন মিউজিক এবং প্লেয়ার এফএম-সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার