স্বাস্থ্য বিষয়ক বিতর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র: রোগীদের দায়ী করার প্রবণতা বাড়ছে?
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাগুলি নতুন মোড় নিয়েছে। বিষয়টির কেন্দ্রে রয়েছেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র, যিনি বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। তাঁর মন্তব্যের জেরে গুরুতর অসুস্থতা এবং জীবনযাত্রার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের প্রতি এক ধরণের দায় চাপানোর দিকে ইঙ্গিত করে।
কেনডি জুনিয়রের মতে, অটিজম, এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট/হাইপারএকটিভিটি ডিসঅর্ডার), বিষণ্ণতা, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজনের মতো সমস্যাগুলির জন্য মূলত দায়ী জীবনযাত্রার ধরন। তাঁর মতে, পরিবেশ দূষণ এবং খাদ্যাভ্যাস সহ জীবনযাত্রার কিছু নির্দিষ্ট বিষয় এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
এই ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি রোগীদেরকেই যেন তাঁদের অসুস্থতার জন্য দায়ী করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য রোগীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে, এমনকী স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক কিছু নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যেখানে রোগীদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। এই ধরনের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে কেনেডি জুনিয়রের মতামত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিতর্কের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, কেনেডি জুনিয়র এবং তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারে এবং তাঁদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারে। তাঁদের মতে, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তাঁরা প্রচলিত চিকিৎসার বাইরে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর জোর দেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই ধরনের ধারণা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও কঠিন করে তুলতে পারে। কারণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, যেমন – স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের সুযোগ – সবার কাছে সমানভাবে উপলব্ধ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিতর্ক স্বাস্থ্যখাতে ভুল তথ্য ছড়াতে পারে এবং আধুনিক চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা কমাতে পারে। তাঁরা মনে করেন, রোগের কারণ হিসেবে জীবনযাত্রাকে দায়ী করার আগে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, কম আয়ের মানুষেরা স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাত্রার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, যা তাঁদের অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।
এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ধরনে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তবে, এখানেও স্বাস্থ্য বিষয়ক সুযোগ-সুবিধা এবং সচেতনতার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিতর্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সুস্থ ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন