ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত: স্বাস্থ্যখাতে কাটের ওপর স্থগিতাদেশ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত বিশাল অংকের অর্থ কাটছাঁটের সরকারি সিদ্ধান্তের উপর আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন একজন ফেডারেল বিচারক। দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার জন্য এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) বিচারক মেরি ম্যাকএলরয় এই নির্দেশ দেন। তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার আমলে মনোনীত হয়েছিলেন, যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বিচারক জানান, ২৩টি রাজ্য ও কলম্বিয়া জেলার পক্ষ থেকে উত্থাপিত আবেদনের শুনানিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিচারক ম্যাকএলরয় বলেন, “আবেদনকারীরা তাদের দাবির পক্ষে জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, তাই আমি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত রায় প্রকাশ করা হবে।

নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস আদালতের শুনানির পরপরই এক টুইটে বলেন, “আমরা এই মামলায় লড়ে যাব এবং নিশ্চিত করব, যাতে রাজ্যগুলো তাদের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো দিতে পারে।”

মার্কিন বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি লেসলি কেইন আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেন। তবে তিনি জানান, স্বল্প সময়ের কারণে হাজার হাজার নথি পর্যালোচনা করার সুযোগ না পাওয়ায়, তিনি তার যুক্তিতর্ক সীমিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

মঙ্গলবার দায়ের করা এক মামলায় রাজ্যগুলো জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি) অর্থ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। এই অর্থ মূলত কোভিড-১৯ বিষয়ক কার্যক্রম, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মাদকাসক্তি নিরাময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। রাজ্যগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এই অর্থ কাটছাঁট করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ভবিষ্যতে মহামারী মোকাবিলায় এবং প্রতিরোধযোগ্য রোগ বিস্তারে ঝুঁকি বাড়াবে। একইসঙ্গে, অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোও ব্যাহত হবে।

তবে, মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (U.S. Department of Health and Human Services) এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, যেহেতু কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তাই এই অর্থ খরচ করার আর প্রয়োজন নেই।

বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ এরই মধ্যে কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে শুধু মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যেই প্রায় ২০০ জন কর্মীকে চাকরি হারাতে হয়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ২৩ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা) এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপিরো, যিনি এই মামলার সঙ্গে জড়িত, জানিয়েছেন তার রাজ্যে বয়স্কদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা) ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে, এই অর্থগুলো এখন আবার সরবরাহ করা শুরু হবে।”

স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দের ওপর এই স্থগিতাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর আগে অভিবাসন থেকে শুরু করে ফেডারেল সংস্থাগুলোতে কর্মী ছাঁটাই এবং রূপান্তরকামীদের অধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায় ১৫০টির মতো মামলায় তারা জর্জরিত। বিভিন্ন ফেডারেল আদালত এরই মধ্যে ডজনখানেক রায় দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে আপাতত স্থগিত করেছে।

তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *