মাথা থেকে পা পর্যন্ত সুস্থ থাকতে চান? গবেষণা বলছে এই ৭টি বিষয়!

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সাতটি মূল মন্ত্র রয়েছে, যা মেনে চললে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (American Heart Association) তাদের ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’ (Life’s Simple 7) নামে একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

এই নির্দেশিকায় ধূমপান থেকে বিরত থাকা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সঠিক রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলা হয়েছে।

গবেষকরা বিভিন্ন গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছেন, ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’-এর নিয়মগুলো মেনে চললে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কীভাবে উপকৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই নিয়মগুলির মধ্যে অন্তত তিনটি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে।

এমনকি যাদের হৃদরোগের জিনগত প্রবণতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর। এছাড়াও, এই নিয়মগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করলে হৃদরোগের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াতেও ইতিবাচক প্রভাব পাওয়া যায়।

গবেষণার প্রধান লেখক, আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লিলিয়ানা আগুয়ানো বলেন, “আগে আমরা জানতাম হৃদরোগ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই গবেষণায় আমরা দেখেছি, ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’-এর স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ এবং কার্যকারিতা উপকৃত হয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এ কথা জেনে খুবই আনন্দিত হয়েছি যে, ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’-এর নিয়মগুলো মেনে চললে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। এটি শুধু হৃদরোগের স্বাস্থ্য রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য কিছু পরিবর্তন এনেও স্বাস্থ্য ভালো করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’-এর নিয়মগুলো অনুসরণ করার স্কোর ১ পয়েন্ট বাড়লে স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি ১১ শতাংশ, চোখের রোগ ৬ শতাংশ, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ২৩ শতাংশ এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি ১১ শতাংশ কমে যায়।

ড. আগুয়ানো বলেন, “এর মানে হল, সামান্য কিছু পরিবর্তন, যেমন—স্থূলতা থেকে স্বাভাবিক ওজনে আসা, এমনকি কম সময়ের জন্য হলেও ব্যায়াম করা—এগুলোও স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করে।”

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’ অনুসরণ করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, ফুসফুসের স্বাস্থ্য, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং পেশীশক্তি দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকে।

এই গবেষণাটি মূলত ‘লাইফ’স সিম্পল ৭’-এর উপর ভিত্তি করে করা হলেও, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বর্তমানে এটিকে আরও বিস্তারিত করে ‘লাইফ’স এসেনশিয়াল ৮’ (Life’s Essential 8) নামে নতুন নির্দেশিকা তৈরি করেছে।

নতুন নির্দেশিকায় ধূমপান থেকে বিরত থাকার বিষয়টি আরও বিস্তারিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পরোক্ষ ধূমপান, ভ্যাপিং এবং নিকোটিনযুক্ত দ্রব্য ত্যাগ করা। স্বাস্থ্যকর খাবারের ক্ষেত্রে মেডিটেরিয়ান বা ড্যাশ ডায়েটের মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে।

আর্টেরিতে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। নতুন নির্দেশিকায় ঘুমের গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা, ৫ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের জন্য ১০ থেকে ১৬ ঘণ্টা, ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা এবং ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

ড. আগুয়ানো বলেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার—এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোও বড় ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে। তাই, স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ধূমপান এবং ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে সামান্য পরিবর্তন এনে হৃদরোগসহ শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য ফল, সবজি, শস্য এবং মাছের মতো চর্বিহীন প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেন।

এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবার, সোডিয়াম ও চিনিযুক্ত পানীয় ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। ব্যায়ামের প্রসঙ্গে, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম (যেমন—হাঁটা, নাচ বা বাগান করা) অথবা ৭৫ মিনিট কঠোর ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ড. আগুয়ানো মনে করেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের নিয়মগুলো মেনে চলা খুব জরুরি। সারা বিশ্বে খুব কম মানুষই এই নিয়মগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করে।

তাই, সবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা সহজলভ্য করা এবং তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

কারণ, হৃদরোগ এখনো মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *