আতঙ্ক! স্বাস্থ্য বীমার খরচ বাড়ছে, ২০২৩ সালে চরম ধাক্কা!

শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে বাড়ছে খরচ: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো বার্তা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য বীমার খরচ আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে চলেছে। নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সাল নাগাদ কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম বাবদ ৬ থেকে ৭ শতাংশ বেশি খরচ করতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, উন্নত বিশ্বের এই চিত্র বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।

স্বাস্থ্যখাতে এই খরচ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ, রোগীদের চিকিৎসা সেবার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, ক্যান্সার চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় এবং ওজন কমানোর ওষুধ (GLP-1) এর ব্যবহার বৃদ্ধি। এই পরিস্থিতিতে, অনেক কোম্পানি তাদের কর্মীদের উপর এই খরচের বোঝা চাপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর সময় অনেক কোম্পানি কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার খরচ বহন করতে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। মার্সার (Mercer) নামক একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৫৯ শতাংশ কোম্পানি আগামী বছর তাদের স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনায় খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিতে চাইছে। এর অর্থ হল কর্মীদের হয়তো স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশি ডিডাক্টিবল (নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যা বীমা চালু হওয়ার আগে আপনাকে দিতে হয়) এবং কো-পে (চিকিৎসা সেবার জন্য নির্দিষ্ট ফি) দিতে হতে পারে।

মার্সারের গবেষণা পরিচালক বেথ উমল্যান্ড বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার খরচ বাড়ছে, যার কারণ স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর উচ্চ মূল্য এবং সেগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার।

আরেকটি বিষয় হল, ক্যান্সার চিকিৎসার ক্রমবর্ধমান খরচ। ব্যবসার স্বাস্থ্য বিষয়ক গ্রুপ (Business Group on Health) এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ক্যান্সার চিকিৎসা কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার খরচ বাড়াতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে কোম্পানিগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং স্ক্রিনিংয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া, ডায়াবেটিস এবং ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত GLP-1 ওষুধও খরচ বাড়াচ্ছে। অনেক কোম্পানি এখন এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কর্মীদের প্রি-অ্যাপ্রুভাল এবং ওজন ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মতো শর্ত যুক্ত করতে পারে।

স্বাস্থ্যখাতে এই খরচ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আরও একটি বিষয় আলোচনা করা হচ্ছে। তা হল মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবার ব্যবহার বৃদ্ধি। কর্মীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সচেতনতা বাড়ার কারণে এই ধরনের সেবার চাহিদা বাড়ছে, যা কোম্পানিগুলোর খরচ বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাতে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করা। যেমন, স্বাস্থ্য বীমার খরচ কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্ব দেওয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। যদিও দুই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভিন্ন, তবুও স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে এমন খরচ বৃদ্ধি পেলে, তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান খরচ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *