কান্নার কারণ! গবেষণা বন্ধ, ট্রাম্পের ডিইআই নীতিতে বধির গবেষকের স্বপ্নভঙ্গ

একটি শ্রবণ প্রতিবন্ধী গবেষকের গবেষণা সহায়তা বাতিল করে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন, পরে আদালতের রায়ে তা পুনর্বহাল।

ডাক্তার ইউরি ম্যানর, যিনি জন্মগতভাবে শ্রবণ-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁর শ্রবণক্ষমতা পুনরুদ্ধার নিয়ে গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গবেষণা সহায়তা বাতিল করে দেয় তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন।

কারণ হিসেবে তারা জানায়, এই গবেষণা সহায়তা ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। এই ঘটনার জেরে ব্যাহত হয় ম্যানরের গবেষণা, এমনকী অনেক কর্মীকেও চাকরি হারাতে হয়।

পরে আদালতের রায়ে এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং গবেষণা সহায়তাটি পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ড. ম্যানর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (স্যান দিয়েগো) একজন গবেষক। তিনি জন্ম থেকেই প্রায় ১০ শতাংশের মতো শুনতে পান।

তিনি জানান, ছোটবেলায় কানসাসের একটি বিশেষ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন, যা তাঁর ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। এরপরে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH)-এ গবেষণা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে শ্রবণ বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হন।

শ্রবণ বিষয়ক গবেষণা বর্তমানে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে। এই ধরনের গবেষণা আমেরিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেখানে প্রায় ৩ কোটির বেশি মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন।

জন্মের সময় প্রতি ৪০০ শিশুর মধ্যে ১ জন এই সমস্যা নিয়ে জন্মায়। সম্প্রতি, জিন থেরাপির মাধ্যমে শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে, যা শিশুদের শ্রবণক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে।

ড. ম্যানরের গবেষণা মূলত শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধারের উপায় নিয়ে। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ডি‌ফনেস অ্যান্ড আদার কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডারস-এর একটি কর্মসূচির অধীনে গবেষণা সহায়তা পান, যার মূল লক্ষ্য ছিল গবেষণা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, যেমন—প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।

এই সহায়তা পাওয়ার পরে, তিনি তাঁর গবেষণাগারে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন DEI বিষয়ক নীতিমালার বিরোধী হওয়ায়, তাঁর পাঁচ বছরের গবেষণা সহায়তার চুক্তি মাঝপথেই বাতিল করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা সংস্থা NIH জানায়, গবেষণার গুণগত মান ভালো হলেও, এটি DEI কর্মসূচির অধীনে আসায় তাদের নীতি অনুযায়ী সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ম্যানরের গবেষণাগারের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং কর্মীদের ছাঁটাই করতে হয়।

পরে আদালতের রায়ে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি ছিল। এর ফলে ম্যানরের গবেষণা সহায়তা পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে বিজ্ঞান গবেষণায় সরকারি নীতিমালার প্রভাব এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে। উন্নত গবেষণার মাধ্যমে শ্রবণহীনতা দূরীকরণে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *