হৃদরোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন এক গবেষণা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীদের সুস্থ করতে বিটা-ব্লকার নামক ওষুধটি কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য,risky হতে পারে।
ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা অনুযায়ী, যাদের হার্টের কার্যকারিতা স্বাভাবিক, অর্থাৎ বাম নিলয়ের নির্গমন ভগ্নাংশ (Left Ventricular Ejection Fraction – LVEF) ৫০ শতাংশের বেশি, এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে ‘রিবুট’ (REBOOT) নামক একটি বিশাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে, যেখানে স্পেন ও ইতালির ১০৯টি হাসপাতালের ৮,৫০৫ জন হৃদরোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের হার্ট অ্যাটাকের পর সামান্যতমও ক্ষতি হয়নি, সেইসব মহিলাদের ক্ষেত্রে বিটা-ব্লকার ব্যবহার করলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের দুর্বলতাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা বাড়ে।
এমনকি, ওষুধটি গ্রহণ না করা মহিলাদের তুলনায় এই ওষুধ সেবনকারী নারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় তিনগুণ বেশি ছিল।
ডা. ভ্যালেন্টিন ফুস্টার, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই ফুস্টার হার্ট হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট এবং মাদ্রিদের ন্যাশনাল সেন্টার ফর কার্ডিওভাসকুলার ইনভেস্টিগেশনের জেনারেল ডিরেক্টর, এই গবেষণার প্রধান গবেষকদের একজন।
তিনি জানান, “এই গবেষণা নারী ও পুরুষের জন্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের চিকিৎসায় একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে এবং আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনগুলোতে পরিবর্তন আনবে।”
যদিও এই গবেষণা নারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ, তবে যাদের হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ৪০ শতাংশের নিচে, তাদের ক্ষেত্রে বিটা-ব্লকার এখনও জীবন রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।
কারণ এটি হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, যা দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
তাছাড়া, যারা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে LVEF-যুক্ত রোগী, তাদের ক্ষেত্রেও বিটা-ব্লকার কিছু সুবিধা দিতে পারে বলে ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় লিঙ্গ-নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, পুরুষ ও মহিলাদের শরীরে ওষুধের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।
মহিলাদের হৃদযন্ত্র সাধারণত আকারে ছোট হওয়ায় তারা অনেক ওষুধের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারে।
এছাড়াও, হৃদরোগের উপসর্গ এবং শরীরে এর প্রভাব পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ভিন্ন হতে দেখা যায়।
বাংলাদেশেও হৃদরোগ একটি গুরুতর সমস্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগ বর্তমানে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।
তাই, এই গবেষণার ফল বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বিটা-ব্লকার এখানেও হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
গবেষকরা বলছেন, বিটা-ব্লকারের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
বিশেষ করে যাদের হার্টের কার্যকারিতা ভালো, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহারের আগে ঝুঁকি ও উপকারিতা ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করে চিকিৎসার নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করা যেতে পারে।
এর ফলে, রোগীদের জীবন আরও সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন