অবিশ্বাস্য! মেয়ের হৃদয় অন্য শরীরে, দুই মায়ের অশ্রুসিক্ত আলিঙ্গন!

মৃত্যু একদিকে যেমন শোকের ছায়া নিয়ে আসে, তেমনই কখনও কখনও জন্ম দেয় নতুন জীবনের। এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে আমেরিকায়, যেখানে এক মায়ের শোক পরিণত হয়েছে আরেক শিশুর জীবনে নতুন আলোয়।

আট বছর বয়সী ম্যাডির অকাল প্রয়াণের পর তাঁর হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয় মিরেয়া মুডি নামের এক শিশুর শরীরে। এই ঘটনার মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক গভীর সম্পর্ক, যা ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি শান্ত পার্কে, এক গ্রীষ্মের দুপুরে মিলিত হয়েছিলেন লিসা শেইন এবং তাঁর পরিবার, আর মিরেয়ার মা বিয়াঙ্কা রবিনসন। লিসা তাঁর প্রয়াত কন্যা ম্যাডির হৃদস্পন্দন অনুভব করার জন্য মিরেয়ার বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়েছিলেন।

সেই মুহূর্তটি ছিল গভীর আবেগপূর্ণ। এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে ৮ বছর বয়সী মিরেয়া জানায়, “আমি লিসা আন্টিকে শান্ত করতে চেয়েছিলাম, তাই আমি যা সবচেয়ে ভালো পারি, সেটাই করেছিলাম।”

২০২২ সালের ১লা এপ্রিল, এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ম্যাডির আকস্মিক মৃত্যু হয়। সেই শোকের সময়ে লিসা শেইন এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি তাঁর মেয়ের অঙ্গদানের অনুমতি দেন। লিসা বলেন, “ম্যাডি ছিল খুবই প্রাণবন্ত, হাসিখুশি, এবং সবসময় নতুন কিছু করতে ভালোবাসতো।

খেলাধুলা, গান—সবকিছুতেই তার উৎসাহ ছিল।” মেয়ের মৃত্যুর পর লিসা চেয়েছিলেন, ম্যাডির জীবন যেন বৃথা না যায়। তাই তিনি অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন, যা চারজনের জীবন বাঁচিয়েছিল।

মিরেয়া মুডি, যার শরীরে ম্যাডির হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, জন্ম থেকেই এক বিরল হৃদরোগে ভুগছিল।

“বাম নিলয়ের নন-কম্প্যাকশন কার্ডিওমায়োপ্যাথি” (Left ventricular non-compaction cardiomyopathy – LVNC) নামক এই রোগে তার হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।

মিরেয়ার মা বিয়াঙ্কা রবিনসন জানান, “চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, মিরেয়ার হৃদযন্ত্র বেশিদিন টিকবে না। তার ফুসফুসেও সমস্যা দেখা গিয়েছিল।”

এই অবস্থায়, একটি “বার্লিন হার্ট” নামক যন্ত্রের মাধ্যমে মিরেয়ার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল।

যখন জানা গেল যে একটি হৃদযন্ত্র পাওয়া গেছে, তখন বিয়াঙ্কার মনে একইসঙ্গে আনন্দ এবং গভীর শোকের সৃষ্টি হয়েছিল।

তিনি বলেন, “আমি একদিকে যেমন খুশি হয়েছিলাম যে আমার মেয়ে নতুন জীবন পাবে, তেমনই অন্য পরিবারের কথা ভেবে কষ্টও হচ্ছিল। আমি জানতাম, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্য একটি পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা অনুভব করবে।”

মিরেয়ার অস্ত্রোপচার সফল হয় এবং ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। যদিও মাঝে মাঝে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তবে এখন সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই বছর পর, লিসা শেইন এবং বিয়াঙ্কা রবিনসনের পরিবার প্রথমবারের মতো মিলিত হয়।

লিসা জানান, “সেই সাক্ষাৎটা ছিল খুবই আবেগপূর্ণ। আমরা বুঝতে পারছিলাম, ম্যাডি যেন মিরেয়ার মধ্যে বেঁচে আছে। মিরেয়াকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে ম্যাডির অবদান, আমার শোক কিছুটা হলেও কমিয়েছে।”

এই দুটি পরিবারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁরা ম্যাডির স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

লিসা জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতি বছর ম্যাডির স্মরণে একটি ৫ কিলোমিটার দৌড়ের আয়োজন করেন, যেখান থেকে সংগৃহীত অর্থ ম্যাডির নামে একটি বৃত্তি প্রকল্পে ব্যয় করা হয়।

অঙ্গদান শুধু একটি ধারণা নয়, বরং এটি মানুষের জীবন বাঁচানোর এক বাস্তব উপায়। বিয়াঙ্কা রবিনসন বলেন, “আগে আমি অঙ্গদানের গুরুত্ব সেভাবে বুঝিনি, তবে মেয়ের জীবন বাঁচানোর পর এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পেরেছি।”

লিসা শেইন মনে করেন, “প্রত্যেকেরই অঙ্গদানের বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, এটি শুধু একটি ফর্ম পূরণ করার বিষয় নয়, বরং এটি জীবন বাঁচানোর এক মহান সুযোগ।”

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *