শিরোনাম: মেয়ের মৃত্যু: শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন শোকাহত মা, পাশে পাননি আপনজনদের
একটি মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থেকে, শোকাহত এক মা তাঁর ৬ বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
অনলাইনে তাঁর এই কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি, যা ইতিমধ্যেই অনেকের মনে গভীর দুঃখের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ওই মায়ের মেয়েটির পেটে টিউমার ধরা পড়ে।
চিকিৎসকেরা প্রথমে রোগ নির্ণয় করতে হিমশিম খেয়েছিলেন, কিন্তু যখন নিশ্চিত হলেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মা জানান, এই কঠিন সময়ে তিনি তাঁর নিজের মা এবং স্বামীর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন।
তাঁর শাশুড়ি ও শ্বশুরমশাই এই দুঃসময়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াননি।
জানা যায়, ওই মহিলার স্বামী ১২ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে।
এই কঠিন সময়ে তাঁর শাশুড়ি ও শ্বশুরমশাইয়ের সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।
তাঁদের যুক্তি ছিল, তাঁরা তাঁদের অন্য ছেলের (অর্থাৎ, ওই মহিলার স্বামীর ভাই) সন্তানদের দেখাশোনা করতে ব্যস্ত।
“আমার শাশুড়ি-শ্বশুরমশাইয়ের বাড়ি আমাদের থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দূরে, যেখানে আমার ননদের বাড়ি আমাদের থেকে মাত্র ২৫ মিনিটের পথ,”– এমনটাই জানিয়েছেন ওই মা।
তাঁর কথায়, মেয়ের চিকিৎসার সময় তাঁরা কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন।
যখন অস্ত্রোপচারের দিন ঘনিয়ে আসে, তখনও শাশুড়ি-শ্বশুরমশাই তাঁদের পাশে ছিলেন না।
চিকিৎসকেরা জানান, টিউমারটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল এবং অস্ত্রোপচার করে এর ৬০ শতাংশ অপসারণ করা সম্ভব হয়েছিল।
এর কিছুদিন পরেই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, এটি ক্যান্সার।
এরপর শুরু হয় মেয়ের জীবন বাঁচানোর কঠিন লড়াই।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর মেয়েটির কেমোথেরাপি, স্টেম সেল প্রতিস্থাপন এবং ইমিউনোথেরাপির মতো কঠিন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
এই সময়ে পরিবারটিকে কার্যত সকলের থেকে আলাদা থাকতে হয়েছিল, যাতে মেয়েটির শরীরে কোনো সংক্রমণ না হয়।
মা তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “আমার মেয়ে সব সময় তাঁর দাদুকে (ঠাকুরদা) খুব ভালোবাসত, কিন্তু এই কঠিন সময়ে তাঁরা পাশে ছিলেন না।
তিনি আরও জানান, শাশুড়ি একবার সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে অপারগতা প্রকাশ করেন, কারণ তিনি আট ঘণ্টা ধরে মাস্ক পরে থাকতে পারবেন না।
মেয়ের অসুস্থতার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরে থাকার কথা বলা হলেও, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাতে রাজি হননি।
এমনকি, তাঁরা জানিয়ে দেন, যদি দুই পরিবারের বাচ্চাদের একসঙ্গে দেখা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁরা কারো সঙ্গেই দেখা করবেন না।
মেয়ের চিকিৎসার সময় মা-বাবা তাঁদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য অনুরোধ জানালেও তাঁরা রাজি হননি।
বরং, তাঁরা তাঁদের থেকে দূরেই ছিলেন।
অবশেষে, মেয়েটি যখন সবার সঙ্গে দেখা করার মতো অবস্থায় এলো, তখনও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আসেননি।
ক্যান্সার দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।
মা জানান, “মেয়ে তখন খুব অসুস্থ ছিল।
সে শুধু পরিবারের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল, তার দাদুকে দেখতে চেয়েছিল।
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে যখন মেয়েটি শয্যাশায়ী, তখন তিনি তাঁর কাছের মানুষদের বিদায় জানানোর জন্য ডেকেছিলেন, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির কেউই আসেননি।
জানুয়ারী মাসে মেয়েটি মারা যায়।
মায়ের মতে, মেয়ের এই লড়াইয়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থন না পাওয়াটা তাঁর গভীর কষ্টের কারণ হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি তাঁদের উপর খুব রাগ করি, কারণ তাঁরা আমার মেয়ের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখাননি।
আমার মেয়ে বারবার তাঁর দাদুকে দেখতে চেয়েছিল, অথচ তাঁরা জানতেন, মেয়েটির বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।
মেয়ের মৃত্যুর পাঁচ মাস পর, স্বামীর অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে রাজি নন।
তিনি বলেছেন, “আমি আমার স্বামীর বা ছেলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ককে বাধা দেব না, তবে আমি তাঁদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ রাখব না।
এই ঘটনায় অনেকেই মায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
একজন মন্তব্য করেছেন, “আপনার স্বামী কি বুঝতে পারছেন না যে তাঁরা আপনাদের কোনো সাহায্য করেননি?
আমি হলে, এমন মানুষদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতাম না।
তথ্য সূত্র: পিপল