তীব্র গরমের সময়ে ‘হিট ডোম’-এর (তাপীয় গম্বুজ) প্রভাব: বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা
এই গ্রীষ্মে, বিশেষ করে এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে গরমের তীব্রতা বাড়ছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন শুধু অস্বস্তিই নয়, বরং জনস্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা ‘হিট ডোম’ (তাপীয় গম্বুজ) নামক একটি বিশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতির কথা বলছেন, যা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই হিট ডোম আসলে কী, এর কারণ ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য এর বিপদগুলি কী কী?
হিট ডোম (তাপীয় গম্বুজ) কী?
হিট ডোম হলো এক ধরনের আবহাওয়ার ঘটনা, যেখানে বিশাল আকারের উচ্চচাপ অঞ্চল বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয়ে দিনের পর দিন বা এমনকি কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি অঞ্চলের উপর অবস্থান করে। এই উচ্চচাপ একটি “গম্বুজের” মতো কাজ করে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ উপরে উঠতে বাধা দেয় এবং মেঘ তৈরি হতে দেয় না।
ফলে, দিনের পর দিন আকাশ থাকে পরিষ্কার, রোদ ঝলমলে এবং তাপমাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে আর্দ্রতা বেশি থাকলে তা মানুষের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
হিট ডোম তৈরি হওয়ার কারণ
হিট ডোম সাধারণত বায়ুমণ্ডলের বিশেষ পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হয়। জেট স্ট্রিম নামক শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ যখন তার স্বাভাবিক গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়, তখন এর প্রভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র এবং স্থলভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিট ডোম আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব
যদিও ‘হিট ডোম’ শব্দটি আমাদের দেশে খুব পরিচিত নয়, তবে এর প্রভাব আমরা ইতোমধ্যে অনুভব করতে শুরু করেছি। গত কয়েক বছর ধরে, গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং গরমের সময়সীমাও দীর্ঘ হচ্ছে।
এর কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন, যা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে, বাংলাদেশেও হিট ডোম-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে, যার ফলস্বরূপ তীব্র গরম ও আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়া জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সুরক্ষার উপায়
হিট ডোম পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, এবং যারা বাইরে কাজ করেন, তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গরম ও আর্দ্রতা একসাথে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে, যা ডিহাইড্রেশন, হিট ক্লান্তি এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এই বিপদ থেকে বাঁচতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত এবং ডিহাইড্রেশন এড়াতে হবে।
- গরমের সময় ভারী কাজ করা এড়িয়ে চলা উচিত এবং সরাসরি সূর্যের আলোতে যাওয়া কমাতে হবে।
- ঠান্ডা পরিবেশে, যেমন – শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।
- হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত।
- স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসংহার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে হিট ডোম-এর মতো পরিস্থিতি আরও বাড়তে পারে। তাই, আমাদের সচেতন হতে হবে এবং গরম থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগকেও এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক