বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ: জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন!

হলিউডের আলো ঝলমলে দুনিয়ায় অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হিদার গ্রাহাম। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এখন একজন সফল পরিচালক এবং লেখিকাও।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবন, ক্যারিয়ার এবং নতুন ছবি ‘Chosen Family’ নিয়ে মুখ খুলেছেন গ্রাহাম। যেখানে উঠে এসেছে পরিবার, সম্পর্ক, হলিউডের ভেতরের জগৎ এবং একজন নারী হিসেবে নিজের অধিকার আদায়ের মতো বিষয়গুলো।

হিদার গ্রাহামের মতে, ছোটবেলা থেকেই তিনি অন্যদের খুশি করতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর বেড়ে ওঠা এমন একটি পরিবেশে, যেখানে নিজের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো।

নব্বইয়ের দশকে ‘বগি নাইটস’ (Boogie Nights) ছবিতে অভিনয় করে খ্যাতি পাওয়ার পরও এই প্রবণতা থেকে বেরোতে পারেননি তিনি। এমনকি একসময় বাবা-মায়ের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর।

গ্রাহাম জানান, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে তিনি বুঝতে পারেন, নিজের ভালো লাগা, নিজের ইচ্ছাকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় তাঁর নতুন ছবি ‘Chosen Family’-র ভাবনা।

নতুন এই ছবিতে আনা নামের এক নারীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যিনি পরিবারের জটিলতা এবং সমাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে চান।

গ্রাহামের বাস্তব জীবনের সঙ্গে ছবির গল্পের মিল রয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, আনা নামের একটি নারী তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, বিশেষ করে তার রক্ষণশীল বাবার সঙ্গে।

হিদার গ্রাহামের নিজের জীবনেও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রায় ৩০ বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই তাঁর।

তিনি মনে করেন, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি নিজের মতো করে সম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি। তাই ছবিতেও তিনি এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন।

সাক্ষাৎকারে হিদার গ্রাহাম তাঁর অভিনয় জীবন নিয়েও কথা বলেছেন। হলিউডে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেখানে নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সমস্যা হয়, সে সম্পর্কেও তিনি আলোকপাত করেছেন।

গ্রাহাম জানান, অভিনয় জীবনে তাঁকে প্রায়ই ‘সেক্সি’ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হতো। তাঁর মতে, অনেক সময় একজন নারীকে শুধুমাত্র তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে মূল্যায়ন করা হয়, যা তাঁর বুদ্ধিমত্তা বা অন্যান্য গুণাবলির প্রতি মনোযোগ দেয় না।

তিনি #MeToo আন্দোলন নিয়েও কথা বলেছেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা তাঁদের প্রতি হওয়া যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

হিদার গ্রাহাম জানিয়েছেন, একসময় তিনি প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভে উইনস্টাইনের কাছ থেকে খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন।

উইনস্টাইন তাঁকে তাঁর অফিসে ডেকে সিনেমার প্রস্তাব দেন এবং পরে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। গ্রাহাম এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, কীভাবে সেই পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে রক্ষা করেছিলেন।

সাক্ষাৎকারে হিদার গ্রাহাম আরও বলেছেন, এখনকার সময়ে নারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন এবং ক্যারিয়ার নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।

তিনি মনে করেন, নারীরা এখন সমাজের চাপকে উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। নিজের ভালো থাকার জন্য সমাজের প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসাটা জরুরি।

বর্তমানে, গ্রাহাম তাঁর নতুন ছবি ‘Chosen Family’ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছবিটির পরিচালনা ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন।

তাঁর এই ছবি নারীদের নিজস্বতা এবং আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প বলে।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *