হিথ্রোর আগুনে লন্ডনে চরম দুর্ভোগ, যাত্রীদের চোখে জল!

লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, হাজার হাজার যাত্রী আটকা। ব্রিটেনের জরুরি অবস্থা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

শুক্রবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আগুন লাগার কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম প্রায় সারাদিন বন্ধ ছিল। এর ফলে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন এবং বিমান সংস্থাগুলো তাদের ফ্লাইট পুনর্বিন্যাস করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

হিথরো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করছে। শনিবার তারা অতিরিক্ত ফ্লাইট যুক্ত করেছে এবং টার্মিনালে কর্মীদের সংখ্যাও বাড়িয়েছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে তাদের নিজ নিজ বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ (British Airways) জানিয়েছে, তারা শনিবার তাদের নির্ধারিত ৬০০ ফ্লাইটের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ পরিচালনা করতে পারবে বলে আশা করছে। তবে এমন বড় ধরনের ঘটনার পরে কার্যক্রম পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত জটিল।

শুক্রবার রাতের ওই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১,৩০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং প্রায় ২ লক্ষ যাত্রী বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন। বিমানবন্দরের প্রায় ২ মাইল দূরে অবস্থিত একটি সাবস্টেশনে আগুন লাগার কারণে হিথরোর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা একটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং এরপর আকাশে আগুনের শিখা ও ধোঁয়া উড়তে দেখেন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে।

এই ঘটনার পর ব্রিটেনের দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সরকারও স্বীকার করেছে যে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় প্রস্তুতি কমিশনের প্রধান টবি হ্যারিস বলেছেন, বিমানবন্দরের এই অচলাবস্থা ব্রিটেনের অর্থনীতি ও অবকাঠামোর দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। তিনি বলেন, গত ৪০-৫০ বছরে পরিষেবাগুলিকে আরও কার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে জরুরি অবস্থার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

হিথরোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থমাস ওল্ডবে বিমানবন্দরের কর্মীদের কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, “পরিস্থিতি হিথরো বিমানবন্দরে তৈরি হয়নি। বিমানবন্দর দিনের পর দিন বন্ধ ছিল না, কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল।”

তিনি আরও জানান, জরুরি অবস্থার জন্য বিমানবন্দরের যে ব্যাকআপ পাওয়ার ব্যবস্থা ছিল, তা স্বাভাবিকভাবেই কাজ করেছে, তবে পুরো বিমানবন্দর চালানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

হিথরো বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেখানে গত বছর প্রায় ৮ কোটি ৪০ লক্ষ যাত্রী ভ্রমণ করেছেন।

এই বিশৃঙ্খলা ২০১০ সালের আইসল্যান্ডের Eyjafjallajökull আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে সৃষ্ট ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন কয়েক দিন ধরে ইউরোপের আকাশপথ বন্ধ ছিল।

মার্ক ডোহেরটি নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ও তার স্ত্রী আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝপথে ছিলেন, যখন তাদের ফ্লাইটটি নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে হিথরোর দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু মাঝপথ থেকে তাদের ফ্লাইট ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ডোহেরটি এই পরিস্থিতিকে ‘ব্রিটিশদের চিরাচরিত দুর্বলতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *