ট্রান্স সৈন্যদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিচারকের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় দেশটির একজন বিচারকের সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া বিচারকের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

জানা গেছে, গত ২৭শে জানুয়ারী তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। যেখানে রূপান্তরকামী ব্যক্তিদেও সামরিক বাহিনীতে যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের একটি আদালত রায় দেয়। আদালতের বিচারক আনা রেইস-এর মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন সংবিধানের নাগরিকদের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা বিষয়ক ধারার পরিপন্থী।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে প্রতিরক্ষা সচিব পেete হেগসেথ বিচারক আনা রেইসকে ব্যঙ্গ করে ‘কমান্ডার রেইস’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিচারক রেইস যুদ্ধ বিষয়ক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। হেগসেথ আরও লেখেন, “যেহেতু ‘বিচারক’ রেইস এখন শীর্ষ সামরিক পরিকল্পনাকারী, তাই তিনি সকাল ৬টায় ফোর্ট বেনিংয়ে রিপোর্ট করতে পারেন এবং আমাদের সেনাবাহিনীর রেঞ্জারদের উচ্চ মূল্যের লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন।”

এখানে উল্লেখ্য, বিচারক আনা রেইসকে সাবেক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিয়োগ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে দেশটির বিচার বিভাগ একাধিকবার রায় দেওয়ায়, তাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এমনকি বিচারকদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

শুধু হেগসেথই নন, ট্রাম্প, তার উপদেষ্টা বিলিওনেয়ার ইলন মাস্ক, এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিসহ প্রশাসনের আরও অনেক কর্মকর্তাই বিচারকদের সমালোচনা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি মামলার শুনানিতে বিচারকের দেওয়া রায়ের সমালোচনা করে ট্রাম্প তাকে ‘উগ্র বামপন্থী উন্মাদ’ এবং ‘গোলমাল সৃষ্টিকারী’ হিসেবে অভিহিত করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন।

বর্তমানে, ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা চলছে। এইসব মামলার শুনানিতে কিছু বিচারক নীতিমালার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, যেমন: জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের উপর বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে, হেগসেথ, যিনি একজন সামরিক অভিজ্ঞ এবং সাবেক টেলিভিশন উপস্থাপক, রূপান্তরকামী সৈন্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক বাহিনীতে বৈচিত্র্য, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ বাতিল করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল সি. কিউ ব্রাউন এবং নৌবাহিনীর শীর্ষ অ্যাডমিরালকে পদ থেকে সরিয়ে দেন। ব্রাউন কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে তাকে ওই পদে আনা হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন হেগসেথ।

যদিও ট্রাম্প এবং হেগসেথের সামরিক কর্মকর্তাদের অপসারণের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে, তবে রূপান্তরকামী সৈন্যদের নিষিদ্ধ করার তাদের প্রচেষ্টা বেশ কয়েকটি মামলার জন্ম দিয়েছে।

১১ই ফেব্রুয়ারী সামরিক বাহিনী ঘোষণা করে যে তারা এখন থেকে রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে দেবে না এবং সামরিক সদস্যদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোও বন্ধ করে দেবে। এরপরে, মাসখানেকের মধ্যেই তারা রূপান্তরকামী সদস্যদের সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা শুরু করে।

বিচারক রেইসের আদালতে মামলার আবেদনকারীরা যুক্তি দেন যে এই আদেশ অবৈধ, কারণ ২০২০ সালের একটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, রূপান্তরকামী মানুষের প্রতি কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য করা হলে, তা এক ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য হিসেবে গণ্য হবে।

আদালতে প্রশাসনের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, সামরিক বাহিনী এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা পূরণ না করলে, তাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। এর মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং খাদ্যাভ্যাস জনিত সমস্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১২ই মার্চের শুনানিতে তারা রেইসকে জানান, রূপান্তরকামী ব্যক্তিরা সামরিক চাকরির জন্য উপযুক্ত নয়—এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রশাসনের রায়কে বিবেচনা করা উচিত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *