যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ ও কংগ্রেসের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব, পিটার হেগসেথের স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, এখন থেকে কংগ্রেস সদস্য বা রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলার আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মীকে, এমনকি সামরিক কর্মকর্তাদেরও, দফতরের ‘লেজিসলেটিভ অ্যাফেয়ার্স’ অফিসের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।
সম্প্রতি সিএনএন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনকালে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ, তা যত ভালো উদ্দেশ্যেই করা হোক না কেন, তা দফতরের আইন প্রণয়ন বিষয়ক লক্ষ্যগুলি অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এই নতুন বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছেন প্রতিটি সামরিক শাখার বেসামরিক প্রধান, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান, সকল কম্ব্যাট কমান্ডার এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দপ্তর।
তবে, এই নিয়ম অভ্যন্তরীণ তদারকির দায়িত্বে থাকা পেন্টাগনের ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা ‘কংগ্রেস’-এর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমন কড়াকড়ি আরোপের কারণ হিসেবে পেন্টাগন জানিয়েছে, এর মাধ্যমে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুসংহত, নির্ভুল এবং স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল সিএনএনকে বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সঠিকতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই বিধিনিষেধ কংগ্রেস কীভাবে তথ্য পাবে, সেই বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, হেগসেথের এই পদক্ষেপ তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে এবং বাইরের জগতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ সীমিত করার একটি কৌশল।
এর আগে, হেগসেথ প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীদের থিংক ট্যাংক বা অন্যান্য বাইরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন ডজনখানেক সাংবাদিক পেন্টাগনের জারি করা কিছু বিধিনিষেধের কারণে তাদের পরিচয়পত্র জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র পেন্টাগন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, এই নিয়ম আসলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি নীতিরই ধারাবাহিকতা, যা আগে সেভাবে কার্যকর করা হয়নি।
২০০৬ সালের একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, সকল আইন বিষয়ক কার্যক্রম ‘সেন্ট্রালি ডিরেক্টেড’ হতে হবে এবং ‘লেজিসলেটিভ অ্যাফেয়ার্সের সহকারী সচিব’-এর সঙ্গে সমন্বয় করে তা করতে হবে।
সহকারী সচিব এই বিভাগের আইন বিষয়ক কার্যক্রমের ‘সার্বিক তত্ত্বাবধান’ করবেন।
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে একটি ‘সহযোগিতামূলক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ বজায় রাখা হয়, যা তাদের আইন বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
এই নতুন নির্দেশনার ফলে, কর্মকর্তাদের মধ্যে তথ্যের অসামঞ্জস্যতা দূর করা সম্ভব হবে।
কংগ্রেসের অনেক সদস্য এবং কর্মীর অভিযোগ, হেগসেথের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
একজন সিনেট কর্মী সিএনএনকে জানান, আইনপ্রণেতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী, যোগাযোগ ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ কমে গেছে।
অতীতেও বিভিন্ন সময়ে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে, ওই সিনেট কর্মীর মতে, বাস্তব ক্ষেত্রে এই নিয়মটি শুরুতে যা মনে হচ্ছে, ততটা কঠোর নাও হতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন, “কংগ্রেস ও প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে অনেক প্রয়োজনীয় এবং ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
এখানে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও পেশাদার ব্যক্তিরা তাদের কাজ করছেন এবং কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এর ৯৯ শতাংশই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যারা সরাসরি আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
তবে, যারা কংগ্রেসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি তেমন প্রভাব ফেলবে না।
এই নতুন নির্দেশনার অংশ হিসেবে, সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব ডেন হিউজ-কে কংগ্রেস বিষয়ক কার্যক্রমের পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন