শিরোনাম: হেলিকপ্টার পর্যটনের নিরাপত্তা: উদ্বেগের সৃষ্টি, দৃষ্টান্ত স্থাপন ও বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
নিউ ইয়র্কের আকাশে পর্যটকদের আনন্দভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টার ট্যুর বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সেই আনন্দের আকাশে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন যাত্রীসহ পাইলটের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর হেলিকপ্টার ট্যুরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে বিমান পরিবহন নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর এই দুর্ঘটনা আমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) জানাচ্ছে, শুধু নিউ ইয়র্কেই প্রতি বছর ৩০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত এ ধরনের পর্যটন ফ্লাইট হয়ে থাকে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, হাওয়াই এবং আলাস্কার মতো আরও অনেক স্থানে এই ধরণের ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই হেলিকপ্টারগুলোতে বাণিজ্যিক বিমানের মতো কঠোর নিরাপত্তা বিধি সবসময় মানা হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় ব্ল্যাক বক্স বা ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (উড্ডয়ন তথ্যসংরক্ষণকারী যন্ত্র) থাকে না, যা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। প্রতি বছর হাজার হাজার হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করে। তবে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (NTSB) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিটার গোয়েলজের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য।
তিনি জানান, পর্যটন ফ্লাইটের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয় এবং নিজের সন্তানদেরও তিনি হেলিকপ্টার ভ্রমণে যেতে দিতে চান না।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্ল্যাক বক্স খুবই জরুরি। এই যন্ত্রটি বিমানের ইঞ্জিন থেকে শুরু করে কন্ট্রোলারের প্রতিটি মুহূর্তের তথ্য সংরক্ষণ করে। যদিও এনটিএসবি ২০১৩ সাল থেকেই পর্যটন হেলিকপ্টারগুলোতে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার স্থাপন বাধ্যতামূলক করার কথা বলছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হেলিকপ্টার পাইলটদের একইসঙ্গে পর্যটকদের গাইড হিসেবেও কাজ করতে হয়। তাদের ছবি তোলার জন্য নির্দেশ দিতে হয় এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পাইলটদের এই দ্বৈত ভূমিকা তাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
অতীতেও পর্যটন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। যেমন, ২০১৮ সালে একটি ‘ডোরস-অফ’ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। এমন ঘটনার পর নিয়ম-কানুন আরও কঠোর করা হয়েছে।
FAA পর্যটন সংস্থাগুলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করতে বলেছে। তারা বর্তমানে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নতুন কিছু প্রস্তাবনার ওপর কাজ করছে। তবে, নিরাপত্তা বিধির বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হয়।
কারণ নতুন বিধি তৈরি করলে তা যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ওপর আর্থিক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভ্রমণ সংস্থা নির্বাচন করার আগে তাদের নিরাপত্তা রেকর্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
যদিও বাংলাদেশে হেলিকপ্টার ট্যুর তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু আকাশপথে ভ্রমণের নিরাপত্তা একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, পরিবহন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত তদারকি, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কঠোর বিধি-নিষেধের বিকল্প নেই।
বিশেষ করে, ব্ল্যাক বক্সের মতো অত্যাবশ্যকীয় সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সব ধরনের বিমানে স্থাপন করা উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন