বাংলার আকাশে বাতাসে সবসময়ই যেন মিশে থাকে সাহসিকতার গল্প। আর সেই গল্পগুলো কেবল মানুষের একার নয়, অনেক সময় জুড়ে থাকে আমাদের চারপাশের নিরীহ প্রাণীগুলোও।
সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে মানুষের জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কুকুরেরা। তাদের এই অদম্য সাহস আর প্রভুভক্তির কাহিনী সত্যিই অবাক করার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনা বলি। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে, স্টিভ ক্রিখবাম নামের এক ব্যক্তি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া রাজ্যের জঙ্গলে কাঠ-শিকার করছিলেন। তার সঙ্গী ছিল ‘হেনরি’ নামের একটি কুকুর।
হঠাৎ করেই বুনো ভালুকের আক্রমণের শিকার হন স্টিভ। ভালুকটি যখন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন জীবন বাঁচানোর আর কোনো উপায় ছিল না।
ঠিক সেই মুহূর্তে, হেনরি নামের কুকুরটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ভালুকের ওপর। এরপর শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ।
হেনরির সাহসিকতায় হতভম্ব হয়ে ভালুকটি স্টিভকে ছেড়ে দেয়। মারাত্মক আহত হলেও, স্টিভের জীবন বাঁচে।
এই ঘটনার আট বছর পর, ২০১৮ সালে, ১৮ বছর বয়সে হেনরির মৃত্যু হয়।
৯/১১-এর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায়ও কুকুরদের আত্মত্যাগের ঘটনা দেখা গেছে। মাইকেল হিংসন নামের একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে রোজেল নামের একটি কুকুর ৭৯ তলার ধোঁয়া ও গরমের মধ্যে দিয়ে নিরাপদে নামিয়ে আনে।
ওমার রিভেরা নামের আরেকজন তার সারমেয় সঙ্গী সল্টির সাহসিকতায় সেদিন জীবন ফিরে পান।
ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শ অনুযায়ী রিভেরা তার অফিসে ছিলেন। কিন্তু সল্টির অস্থিরতা দেখে তিনি অফিস ছাড়তে বাধ্য হন এবং দুজনে মিলে নিরাপদে বেরিয়ে আসেন।
কুকুর যে শুধু বিপদ থেকে বাঁচায়, তা নয়। তারা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেরও বন্ধু।
স্কট বেইলি নামের একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে মিilo নামের একটি কুকুর প্রতিদিনের পথ চলতে সাহায্য করে।
একবার রাস্তায় গাড়ি আসার সময় মিলো এমনভাবে দাঁড়িয়ে যায় যে, স্কট বুঝতে পারেন, কোনো বিপদ আসন্ন।
পরে তিনি জানতে পারেন, মিলোর সতর্কতার কারণেই সেদিন বড় একটি দুর্ঘটনা থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন।
কুকুরের সাহসিকতার এমন আরও অনেক নজির রয়েছে।
সু ক্যালভার নামের এক মহিলার জীবন বাঁচিয়েছিল রকি নামের একটি কুকুর। মহিলাটি যখন গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হন, তখন রকি ছুটে গিয়ে তার স্বামীকে খবর দেয় এবং তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে ফেরে।
এছাড়াও, বেন্টো নামের একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর তার মালিককে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে নিজের জীবন দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুকুরদের মধ্যে মানুষের প্রতি ভালোবাসার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
তারা সবসময় তাদের মালিকদের পাশে থাকতে চায়, তাদের কষ্ট বুঝতে পারে এবং তাদের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে।
এমনকি প্রশিক্ষণ ছাড়াই অনেক কুকুর তাদের মালিকদের বিপদে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।
কুকুরদের এই অসীম সাহস আর ভালোবাসার গল্পগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীতে বন্ধুত্বের কোনো অভাব নেই।
তারা সবসময় আমাদের পাশে আছে, আমাদের ভালো রাখতে চায়, আর তাদের এই ত্যাগ সত্যিই অনস্বীকার্য।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান