মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ (HHS) সম্প্রতি এক নতুন নীতি ঘোষণা করেছে, যা নতুন সব ভ্যাকসিনের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনছে। এই নীতির অধীনে, বাজারে ছাড়ার আগে প্রতিটি নতুন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য এখন প্লেসিবো-নিয়ন্ত্রিত ট্রায়াল (Placebo-controlled trials) পরিচালনা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আপডেটেড সংস্করণগুলোর অনুমোদন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং সহজলভ্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নতুন এই নিয়মের কারণে প্রতি বছর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আপডেট সংস্করণগুলি সময় মতো পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, প্লেসিবো-নিয়ন্ত্রিত ট্রায়াল একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
এই ট্রায়ালে কিছু মানুষকে আসল ভ্যাকসিন এবং কিছু মানুষকে নিষ্ক্রিয় উপাদান (placebo) ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বয়স্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সময় মতো ভ্যাকসিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন (strain) অনুযায়ী ভ্যাকসিন আপডেট করা হয়, যা প্রতিরোধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপডেটেড ভ্যাকসিনগুলি অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং হালকা থেকে মাঝারি অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।
এই সুরক্ষা দুর্বল স্বাস্থ্য অথবা বেশি বয়সের ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, ফিলডেলফিয়ার চিলড্রেন’স হাসপাতালের ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী ড. পল অফিট বলেছেন, “যদি ভ্যাকসিন সময় মতো পাওয়া না যায়, তবে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
তবে, HHS-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিদ্যমান ভ্যাকসিন নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যেমন- ভ্যাকসিন অ্যাডভার্স ইভেন্ট রিপোর্টিং সিস্টেম (VAERS) এবং ভ্যাকসিন সেফটি ডেটালিংক (VSD), ভ্যাকসিনের আঘাতগুলি পর্যাপ্তভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম নয়।
তাদের মতে, এই পদ্ধতিগুলি ‘নিয়ন্ত্রক অব্যবস্থাপনার’ উদাহরণস্বরূপ। HHS এখন এমন নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করছে যা ভ্যাকসিনের ঝুঁকি এবং উপকারিতা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারবে।
অন্যদিকে, ভ্যাকসিন নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা অনেক বিশেষজ্ঞ এই যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো যথেষ্ট কার্যকর এবং এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রতি ৫০,০০০ জনে একজনের হার্দযন্ত্রের প্রদাহ (myocarditis) এবং জনসন অ্যান্ড জনসন (Johnson & Johnson) ভ্যাকসিনের কারণে বিরল রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যাগুলো এই পদ্ধতির মাধ্যমেই চিহ্নিত করা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নীতির কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে ভ্যাকসিন অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA) আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য পর্যালোচনার পর ভ্যাকসিন অনুমোদন করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা রয়েছে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভ্যাকসিন নীতি এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেমন প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: CNN