মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services – HHS) তাদের ওয়েবসাইট থেকে বন্দুক সহিংসতা বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শনামা সরিয়ে ফেলেছে। এই পদক্ষেপটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ট্রাম্পের এই আদেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেওয়া নাগরিকদের অস্ত্র ধারণের অধিকার রক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত।
২০২৪ সালের শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা (সার্জন জেনারেল) একটি বিশেষ পরামর্শনামা প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে বন্দুক সহিংসতাকে একটি জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এর প্রতিকারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এই প্রথমবার, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় কোনো সংস্থা আগ্নেয়াস্ত্রের সহিংসতা এবং এর জনস্বাস্থ্যে প্রভাব নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে। পরামর্শনামায়, গবেষণা বাড়ানো এবং সহিংসতা কমাতে আরও কঠোর আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল।
তবে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর, স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ তাদের ওয়েবসাইট থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শনামাটি সরিয়ে ফেলে। বিভাগের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন এক বিবৃতিতে জানান, “এইচএইচএস এবং সার্জন জেনারেলের কার্যালয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘দ্বিতীয় সংশোধনী অধিকার রক্ষা’ বিষয়ক নির্বাহী আদেশ মেনে চলছে।
আদেশটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় সংশোধনী অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল আদেশ, বিধি, নির্দেশিকা, পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য নির্বাহী বিভাগের পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করার জন্য। এছাড়াও, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে নেওয়া প্রেসিডেন্ট ও সরকারি সংস্থাগুলোর এমন সব পদক্ষেপও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, যা নিরাপত্তা বাড়াতে প্রণীত হয়েছে, কিন্তু অস্ত্র ধারণের অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত সহিংসতায় ৪৬,৭২৬ জন নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যাটি ২০২১ সালের তুলনায় সামান্য কম, যখন এই কারণে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৮,৮৩০ জন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বন্দুকের গুলিতে।
এদিকে, বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক একটি সংগঠন, ‘গিফোর্ডস’ (Giffords) এই পরামর্শনামা সরিয়ে নেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে। গিফোর্ডসের নির্বাহী পরিচালক এমা ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জীবন রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ এই জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শনামা সরিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিশুদের এবং পরিবারদের সুরক্ষার চেয়ে বন্দুক ব্যবসার মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “২০২০ সাল থেকে বন্দুক হলো আমেরিকান শিশু ও কিশোরদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। নিরপেক্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দুক সহিংসতাকে জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে বিবেচনা করছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বন্দুক হামলায় হত্যার ঘটনা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।”
এই ঘটনার পাশাপাশি, বাইডেন প্রশাসনের সময় গঠিত ‘হোয়াইট হাউজ অফিস অফ গান ভায়োলেন্স প্রিভেনশন’ (White House Office of Gun Violence Prevention) নামে বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য গঠিত একটি কার্যালয়ও সম্ভবত কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
জানুয়ারিতে এর ওয়েবসাইটও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই কার্যালয়টি বন্দুক হামলার জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (FBI), ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA) সহ অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন