মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্পের জন্য তহবিল কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে অবশেষে সরে এসেছে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (HHS)। এই পদক্ষেপটি নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা ‘দ্য উইমেন’স হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ (Women’s Health Initiative – WHI) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হওয়ার পরেই নেওয়া হয়েছে।
এই গবেষণা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রবীণ নারীদের মধ্যে ক্যান্সার, হৃদরোগ, অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়) সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো। কয়েক দশক ধরে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health – NIH) এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই গবেষণায় কয়েক হাজার নারীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
মেনোপজের (মাসিক বন্ধ) পর নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি কিভাবে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা লাভের চেষ্টা করা হয়েছে।
শুরুর দিকে, HHS এই প্রকল্পের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পরিকল্পনা করেছিল, যা চলমান গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারত। কিন্তু সমালোচনার মুখে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
HHS এক বিবৃতিতে জানায়, নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে এই গবেষণাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও জানায়, NIH প্রথমে তাদের অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও, বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য সম্পূর্ণ তহবিল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্ভরযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যেতে NIH প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
HHS-এর সেক্রেটারি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এক সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করেন, “আমরা এই গবেষণা বন্ধ করছি না। আমরা সবাই বুঝি, নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক বৃহত্তম দীর্ঘমেয়াদী গবেষণাগুলোর একটিতে অর্থ হ্রাস করা হলে তা হবে একটি মারাত্মক ক্ষতি।
এর ফলে মূল্যবান তথ্যভাণ্ডার এবং চলমান গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলো ঝুঁকির মুখে পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, মেনোপজের সময় হরমোন থেরাপির ঝুঁকি এবং হাড়ের ক্ষয় রোধে ভিটামিন ডি-এর অকার্যকারিতা সম্পর্কিত তথ্য এই প্রকল্পের প্রধান আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে সাহায্য করা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় নারীদের অন্তর্ভুক্ত না করার দীর্ঘদিনের প্রবণতা ছিল। ‘উইমেন’স হেলথ ইনিশিয়েটিভ’-এর মতো প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এটি নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচলিত ধারণাগুলোর বাইরে গিয়ে, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্য সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
১৯৯২ সালে ‘উইমেন’স হেলথ ইনিশিয়েটিভ’-এর সূচনা চিকিৎসা গবেষণায় নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে।
গবেষকরা বলছেন, আগে নারীদের স্বাস্থ্যকে কেবল প্রজনন ক্ষমতা এবং শরীরের কিছু অংশের (যেমন, অন্তর্বাস পরিধান করা যায় এমন অংশ) মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখা হতো। কিন্তু এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্যের মতো সমস্যাগুলো নারীদের মধ্যে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে দেখা যায় এবং এর কারণগুলোও আলাদা।
তাই, নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদাভাবে গবেষণা করা প্রয়োজন।
বর্তমানে, বাংলাদেশেও নারীদের স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, এবং হৃদরোগের মতো সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে গবেষণা সহায়ক হতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN