শিরোনাম: ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্য: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এখন কঠিন?
বর্তমান বিশ্বে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশেই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্য অনেক মানুষের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে কঠিন করে তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিষয়টি কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মনে করেন, গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্যকর খাবারের দাম বেড়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশ বলছেন, উচ্চমূল্যের কারণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে কম আয়ের মানুষের মধ্যে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, যাদের আয় কম, তাদের প্রায় ৪৭ শতাংশ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে সমস্যা অনুভব করছেন, যেখানে উচ্চ আয়ের মানুষের মধ্যে এই হার মাত্র ১৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হলে খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। ডা. ডেভিড ক্যাৎস, যিনি প্রতিরোধমূলক ও জীবনযাত্রাবিষয়ক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ, তাঁর মতে, শস্য, ডাল ও সবজির মতো পুষ্টিকর ও সাশ্রয়ী খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
এগুলো একদিকে যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনই পকেট-সই। অন্যদিকে, চিনিযুক্ত পানীয় ও বেশি দামি মাংস জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. ফ্রাঙ্ক হু মনে করেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় মনে রাখা দরকার। যেমন—শাকসবজি ও ফলমূলের মতো উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার বেশি খাওয়া, ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা এবং অতিরিক্ত চিনি ও লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য তালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্যও একটি উদ্বেগের বিষয়। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির খাদ্য সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশই প্রক্রিয়াজাত খাবার।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, এই ধরনের খাবারে এমন উপাদান ব্যবহার করা হয় যা সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় না। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের ফলে হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বাংলাদেশেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। চাল, ডাল, তেল, সবজি—সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে, যা সীমিত আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণকে কঠিন করে তুলছে।
সরকারি হিসাবে, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।
তাহলে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিভাবে বজায় রাখা সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
এছাড়া, মৌসুমী সবজির ব্যবহার বাড়ানো এবং ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
খাদ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে সচেতনতা ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।